জাতীয়
আইএমএফের ঋণ নিচ্ছে সরকার
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইসিএফ) এর শেষ দুই কিস্তির ২৮ কোটি ডলার বাংলাদেশ নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। আগামী অক্টোবরের মধ্যে এ অর্থ পাওয়া যাবে। বিদেশি অডিট কোম্পানি দিয়ে বিপিসির সমুদয় হিসাব অডিট করার ক্ষেত্রে আইনগত কোনো বাধা না থাকায় সরকার এর আগে নেওয়া সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে বলে তিনি জানান।
সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়কালে অর্থমন্ত্রী বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন। এ সময় তিনি আইএমএফের ঋণ নিয়েও কথা বলেন।
আইএমএফের কাছ থেকে ইসিএফ এর আওতায় মোট ৯৮ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ চুক্তি হয়েছিল। চুক্তির পর এ ঋণের পাঁচ কিস্তিতে মোট ৭০ কোটি মার্কিন ডলার ইতিমধ্যে ছাড় হয়েছে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী অবশিষ্ট দুই কিস্তির অর্থ গত বছর নভেম্বরে এবং চলতি বছরের মার্চ মাসে পাওয়ার কথা ছিল।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানতাম সরকারি কোনো সংস্থায় বিদেশি কোনো অডিট ফার্ম দিয়ে অডিট করানো যায় না। ইসিএফের শেষ দুই কিস্তির ২৮ কোটি ডলার ছাড়ের আগে আইএমএফ বিপিসির সমুদয় হিসাব কোনো বিদেশি কোম্পানি দিয়ে করানোর শর্ত দেয়। আমি মনে করেছিলাম, এটা করতে হলে আমাদের আইন পরিবর্তন করতে হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমি ইসিএফ ঋণের শেষ দুই কিস্তির অর্থ না নেওয়ার কথা বলেছিলাম।’
তিনি বলেন, ‘ওই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর আইন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সরকারি সংস্থায় অডিট বিদেশি কোনো ফার্ম দিয়ে করানো যাবে না, এমন কোনো শব্দ নেই। যে কোনো অডিট ফার্ম দিয়ে করানো যাবে বলে উল্লেখ আছে। কাজেই বিপিসির হিসাব বিদেশি প্রতিষ্ঠান দিয়ে করার ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। আইএমফের ইসিএফ ঋণের শেষ দুই কিস্তির অর্থ আগামী অক্টোবরের মধ্যে পাব বলে আশা করছি।’
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা গেছে. বিপিসির হিসাব বিদেশি অডিট ফার্ম দিয়ে করানোর শর্ত দেওয়ার পর দেশীয় অডিট কোম্পানিগুলো যে কোনোভাবেই হোক অর্থমন্ত্রীকে আইনের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে বিভ্রান্ত করে। এরই ফলশ্রুতিতে ইসিএফ ঋণের শেষ দৃুই কিস্তির অর্থ পাওয়ার ক্ষেত্রে গত ১৫ জুলাই অর্থমন্ত্রী আইএমএফের শর্ত মেনে বিপিসির অডিট বিদেশি অডিট ফার্ম দিয়ে করানোর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। একই সঙ্গে তিনি কিস্তির অর্থ প্রত্যাখ্যান ও আইএমএফের সঙ্গে ইসিএফ ঋণ চুক্তি নবায়ন না করারও ঘোষণা দেন। আজ সে অবস্থান থেকে সরে এসে বিপিসির হিসাব বিদেশি ফার্ম দিয়ে অডিট করানোর শর্ত নেমে নেওয়ার কথা জানান।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বিপিসি যেভাবে চলছে, সেভাবে কোনো প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। ব্যাডলি ম্যানেজড। চোর-টোর বলা যায়। এর আগে যে চেয়ারম্যান ছিল, তার সময় থেকেই এমনটা হয়েছে। মানুষ হিসেবে সৎ ছিলেন, কিন্তু প্রশাসক হিসেবে তিনি কোনো যোগ্যতা দেখাতে পারেননি। এই সুযোগে প্রতিষ্ঠানটি হরিলুটের জায়গা হয়েছিল। এ প্রতিষ্ঠানটির কোনো ব্যলান্স শিটও নেই। চুরির সুবিধার্থে তারা কোনো অডিটও করায়নি।’
এর আগে এক চিঠির মাধ্যমে বিপিসি সম্পর্কে আইএমএফের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিপিসির বার্ষিক ৫০ হাজার কোটি টাকার মতো আর্থিক লেনদেন হয়। এ বিশাল অঙ্কের অর্থ লেনদেন হলেও এখানে কোনো নিরীক্ষা করা হয় না। ফলে অর্থের অপচয় বা দুর্নীতি হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এ ছাড়া বিপিসির আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য এ প্রতিষ্ঠানকে বিদেশি কোনো ফার্ম দ্বারা অডিট করানোর প্রয়োজন রয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘তিন বছর মেয়াদি এ চুক্তিটি ২০১২ সালের এপ্রিল মাস থেকে শুরু হয়। পরে দুই মাস সময় বাড়ানোর কারণে ইসিএফ চুক্তির মেয়াদ চলতি মাসের ৩০ তারিখে শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ২২ জুলাই আইএমএফ বোর্ড সভায় নেওয়া হবে।’
সূত্র জানায়, আইএমএফ দক্ষিণ এশীয় বিষয়ক নির্বাহী পরিচালক রাকেশ মোহন চলতি মাসে অর্থসচিবের কাছে একটি চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, শর্ত সাপেক্ষে সরকার এ চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
এদিকে সংশ্লিষ্ট দুজন কর্মকর্তা আইএমএফকে সরকারের দুই ধরনের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। গত ১৪ জুলাই অতিরিক্ত সচিব জালাল আহমদ এক চিঠিতে ইসিএফ ঋণের চুক্তির মেয়াদ না বাড়ানোর কথা জানান। এরপর হাবিবুর রহমান নামের একজন উপসচিব সময় বাড়ানোর কথা জানান। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার নির্বাহী পরিচালক রাকেশ মোহন বিষয়টি নিশ্চিত করতে অর্থমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। এর মাধ্যমে বিষয়টি পরিষ্কার করার অনুরোধ করেছেন তিনি। এরই মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চুক্তির সময় বাড়ানোর আগ্রহের কথা জাননো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।