জাতীয়
উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করবেন না : প্রধানমন্ত্রী
মেট্রো রেলের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ এবং নতুন পে-স্কেলের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীদের কল্যাণের জন্যই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভিতর দিয়ে রেল লাইন নেয়া হচ্ছে। তিনি মর্যাদা বজায় রাখা ও সুবিধা লাভের লক্ষ্যে আন্দোলনের নামে শিক্ষা কার্যক্রম অচল না করার জন্য শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানান।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে দেশের বিজয় লাভের পর পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর ‘স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস’ উপলক্ষে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে আয়োজিত বিশাল সমাবেশে বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটানোর জন্য কাজ করছে এবং চায় যে বাংলাদেশের জনগণ একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ জীবন পাবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণের জন্য কোনটি কল্যাণকর এবং তারা কিভাবে আরো বেশী সুবিধা লাভ করবে অন্তত সে জ্ঞান তাঁর রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের জনগণ সাত বছর আগে উন্নয়নের এই গতি কল্পনাও করতে পারেনি। ২১ বছর তারা উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত ছিল। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণ করার পর কার্যত তারা উন্নয়ন দেখেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন অগ্রগতির পথে রয়েছে এবং তা অব্যাহত থাকবে। আমরা জাতির জনকের স্বপ্ন অনুযায়ী একটি দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত দেশ গড়তে চাই। তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে গত সাত বছরে ৫ কোটি লোক চরম দারিদ্র্য অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন একটি নি¤œ মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃত। তবে, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে তাঁর পূর্ণ আস্থা ব্যক্ত করে বলেন, বাধা সৃষ্টি করে কেউ দেশের উন্নয়নের গতিপথ পরিবর্তন করতে পারবে না।
তিনি দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে তাঁর দলের সক্ষমতার ওপর আস্থা বজায় রাখার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে আরো বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ আজিজ ও সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এমপি ও ডা. দীপু মনি এমপি এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের (দক্ষিণ) মেয়র সাঈদ খোকন, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের (উত্তর) মেয়র আনিসুল হক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার বিএনপি’র ধ্বংসাত্মক রাজনীতি থেকে দেশকে রক্ষা করেছে এবং দেশের অর্থনীতি ও রাজনীতিকে একটি নিয়মতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে এনেছে। পাশাপশি জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের শক্ত হাতে দমন করা হয়েছে।
ইতিবাচক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সকল সূচকের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ভোক্তাদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, তা সত্ত্বেও এক শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তা এই বেতন বৃদ্ধিতে সšুÍষ্ট নয়।
সরকারের গৃহীত নানা উন্নয়ন কর্মসূচির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যানজট নিরসনে ফ্লাইওভার, ফুটওভার ব্রিজসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যানজটমুক্ত ঢাকা গড়তে নির্বাচিত মেয়ররাও দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন।
যানজটমুক্ত চলাচল নিশ্চিত করার জন্য উড়াল সেতু নির্মাণ করা হয়েছে, মেট্রো রেল নির্মাণেরও পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ঢাকা ইউনিভার্সিটির শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কথা চিন্তা করে সেখানে একটি স্টেশন রাখা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, মেট্রো রেল হলে উত্তরা-বিমানবন্দর থেকে ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, এক সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাতেও রেল লাইন ছিল, ফুলবাড়িয়াতে রেল ষ্টেশন ছিল। ট্রেনে বিভিন্ন এলাকা থেকে শিক্ষক-ছাত্ররা আসা-যাওয়া করতেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও রেল লাইন আছে। বিশ্বের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের সুবিধার জন্য রেল সংযোগ রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আধুনিক প্রযুক্তিতে মেট্রো রেল করা হচ্ছে রেল লাইন যাবে ওপর দিয়ে, সেখানে সাউন্ডপ্রুফ, দরকার হলে তাও করা হবে।
সারাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, হাতে হাতে মোবইল ফোন, গ্রামে-গঞ্জে ইন্টারনেট থাকায় বিশ্ব এখন মানুষের হাতের মুঠোয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে দেশের ৭৫ শতাংশ মানুষের ঘরে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দিয়েছি। ইনশাল্লাহ ২০২১ সালে আমরা প্রতিটি ঘরে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দিতে সক্ষম হব।
প্রধানমন্ত্রী ৭ বছরের উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনের চিত্র তুলে ধরে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা, বয়স্কা ও বিধবা ভাতাসহ নানা সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতায় বিপুল সংখ্যক সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে নিয়ে এসেছি।
বাঙালি জাতির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি এক ঐতিহাসিক দিন স্মরণ করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে এদিন স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন যার মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা লাভ পূর্ণতা পায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। প্রথমেই তিনি ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সদস্যদের দ্রুত দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনীরা ভেবেছিল তাদের অবৈধ শাসন চিরদিন টিকে থাকবে। তাই, তারা হত্যা ও ক্যুর রাজত্ব কায়েম করেছিল। যেসব যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তানে আশ্রয় নিয়েছিল, জিয়াউর রহমান তাদেরকে ফিরিয়ে এনেছিল। ১৯৯৬ সালে জনগণ জেগে ওঠে ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসানোর পর খুনীদের চিন্তা-ভাবনা ভুল প্রমাণিত হয়।
শেখ হাসিনা আরো বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করার পর ১৯৭৫ সালের হত্যাকাণ্ডের সুবিধাভোগীরা ভীত হয়ে পড়ে। তারা বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করার লক্ষ্যে কোন চেষ্টাই বাদ রাখেনি। তারা পিলখানায় ও দেশের অন্যত্র বাংলাদেশ রাইফেলস বাহিনীতে বিদ্রোহ ঘটিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা চালিয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া ও তার পুত্র তারেকের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় বিডিআর বিদ্রোহ ঘটেছে। খালেদা জিয়ার আচরণ, টেলিফোন আলাপ-চারিতা এবং অন্যান্য কর্মকাণ্ড এই হত্যাকাণ্ডে তাদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া এখনও তার পাকিস্তান প্রীতি ভুলতে পারেন না। তাই, তিনি পাকিস্তানীদের দোসরদের সুরে সুর মিলিয়ে পাকিস্তানের পক্ষে কথা বলেন। এমনকি তিনি মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়েও বিতর্ক সৃষ্টি করার দুঃসাহস দেখিয়েছেন। বাসস।