Connect with us

বিশেষ নিবন্ধ

উন্নয়ন আর শান্তি এক কথা নয়

Published

on

11358886_944691085595528_903518145_n (2)

হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম :
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর অন্যায়, অবিচারের বিরুদ্ধে এদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে যুদ্ধ করে বাংলাদেশ নামক একটা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠন করে। গত ৪৪ বছর এ জাতিটাকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে দেয় নি পশ্চিমা ষড়যন্ত্র, রাজনীতিক সুবিধাবাদী গোষ্ঠী ও ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণি। আজ আমরা ১৬ কোটি মানুষ যদি কেবল ঐক্যবদ্ধ থাকতাম তবে পৃথিবীতে আমরা একটি অদম্য পরাশক্তিরূপে আবির্ভূত হতাম। ঐক্যে জয়, অনৈক্যে পরাজয়- এটা প্রাকৃতিক নিয়ম। সেই প্রাকৃতিক নিয়মানুসারে অনৈক্যের ফলে আজ আমাদের ধ্বংস হওয়ার উপক্রম। আমাদের ঐক্য নষ্ট হওয়ার পেছনে মূলত ২টি বিষয় দায়ী।

(ক) পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের চাপিয়ে দেয়া বিভিন্ন মতবাদের উপর গড়ে উঠা শত শত রাজনৈতিক দল যারা বিভিন্ন ইস্যু সৃষ্টি করে গণতন্ত্রের নামে বার বার হরতাল, অবরোধ, ভাঙচুর, বোমাবাজি ইত্যাদি সৃষ্টি করে জাতিকে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করে রেখেছে।

(খ) পূর্ব থেকেই আলেম-পণ্ডিত শ্রেণি ধর্মের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অতি ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে জাতির মধ্যে বহু ফেরকা-মাযহাব, ফতোয়া ইত্যাদি দিয়ে শত শত মত-পথ, তরিকার জন্ম দিয়ে জাতিটাকে খণ্ড বিখণ্ড করে রেখেছে। আবার ধর্ম ব্যবসায়ী একটি শ্রেণি যারা ধর্মকে ব্যবহার করে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষের ঈমানকে হাইজ্যাক করে ভুলখাতে প্রবাহিত করেছে। কেউ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে, কেউ ব্যক্তিস্বার্থে, কেউ জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ করতে মানুষের ঈমানকে কাজে লাগিয়ে দেশ ও জাতির ক্ষতি করেছে। ফলে কিছুদিন পরপর নানা রকম ইস্যুকে কেন্দ্র করে দাঙ্গা, হাঙ্গামা ইত্যাদির সৃষ্টি হয়েছে।

একদিকে পশ্চিমা বস্তুবাদী সভ্যতার ষড়যন্ত্র, অপরদিকে ধর্মব্যবসায়ীদের কর্মকাণ্ড এই উভয় দিক ছাড়াও আরো অনেক কারণে আমাদের প্রিয় জন্মভূমির বাসিন্দা ষোল কোটি মানুষ একটা শক্তিশালী জাতিসত্তা গঠন করতে পারি নি।

বাংলাদেশ সরকার দেশবাসীর সুখের জন্য বহুমুখী উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হাতে নিয়ে থাকে। কোন সন্দেহ নেই যে, এতে দেশের অবকাঠামোগত ও বৈষয়িক উন্নতি যথেষ্ট হয়েছে এবং হবে। রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট, দালান কোঠা ইত্যাদি উন্নত থেকে উন্নততর হবে। কিন্তু ঘনবসতিপূর্ণ একটি দেশের মূল সমস্যা কি এই অবকাঠামোগত পশ্চাৎপদতা? অবশ্যই না। বরং একটি জাতির সফলতা ও উন্নতি নির্ভর করে সেই জাতিটি কতটা শক্তি ও সামর্থ্য অর্জন করল, জাতির মানুষগুলো চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে কতটা ন্যায়নিষ্ঠ, দেশপ্রেমিক, ভ্রাতৃত্বপরায়ণ, তাদের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কতটা স্থিতিশীল, তাদের সামাজিক নিরাপত্তা আছে কিনা, অর্থব্যবস্থা কতটা দুর্নীতিমুক্ত, ধনী-গরিবের ব্যবধান কতটা প্রকট ইত্যাদি প্রেক্ষাপটের উপর। বিরাট বিরাট চোখ ধাঁধানো দালান কোঠা আছে কিন্তু সুখ, শান্তি-শৃঙ্খলা নেই, এমন দেশকে উন্নত দেশ বলার কোনো সুযোগ নেই।

আজকে আমরা যে উন্নয়ন করছি এই জাতীয় অবকাঠামোগত উন্নয়ন পাশ্চাত্য (ডবংঃ) বহু আগেই করেছে। কিন্তু তাতে অন্যায় অশান্তি যুদ্ধ রক্তপাত কমে নি বরং পরিসংখ্যান বলছে সেখানে ধাঁই ধাঁই করে খুন, রাহাজানি, সন্ত্রাস বেড়েই চলেছে। তারা প্রথমে ভেবেছিল তাদের অর্থনৈতিক এবং অবকাঠামোগত তথা বস্তুগত উন্নয়নই তাদের কাক্সিক্ষত সুখ এবং সমৃদ্ধি এনে দেবে। সেজন্য তারা একটি ভারসাম্যপূর্ণ জীবন ব্যবস্থার কথা চিন্তা না করে তাদের জাতীয় জীবনে ধর্মকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্র কাঠামোতে পুরোপুরি বস্তুবাদী এবং মানব রচিত জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে অবকাঠামোগত উন্নয়নের পেছনে উঠে পড়ে লেগেছিল। এই বস্তুবাদী উন্নয়ন করতে করতে তাদের এমন অবস্থা যে এমন হাইওয়ে আছে যা ষোলটি দেশকে অতিক্রম করেছে, এমন ফ্লাইওভার আছে যার প্রতি প্রান্তে ২৬টি লেন আছে। কিন্তু সেগুলোর বিবরণ দেওয়া আমার উদ্দেশ্য নয়। আমার কথা হচ্ছে এই অবকাঠামোগত উন্নয়ন দেখেই আমরা সেই দেশগুলোকে উন্নত দেশ বলে আখ্যায়িত করি। তাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা ও প্রযুক্তির ব্যবহার অত্যাশ্চর্য। কিন্তু মানুষ সেখানে কতটা সুখী তা নির্ভর করে সেখানকার অপরাধের পরিমাণ, তাদের পারস্পরিক সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধন কতটা দৃঢ় তার উপর।

কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে সর্বোচ্চ সংখ্যক ধর্ষণ ঘটে উচ্চাভিলাসীদের স্বর্গভূমি যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে প্রতিটি ৬ জন নারীর একজন ধর্ষিতা হন। তাদের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের আত্মহত্যার পরিমাণ সর্বোচ্চ। নরহত্যার হারের দিক থেকে আমেরিকা মহাদেশ বিশ্বে প্রথম। অন্যান্য সকল প্রকার অপরাধ সংঘটনের র‌্যাংকিং-এও সর্বাগ্রে আছে সেই যুক্তরাষ্ট্র।

এই পরিসংখ্যানটি জাতিসংঘ প্রস্তুত করেছে। এখানে যে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডগুলো কর্তৃপক্ষের গোচরীভূত (ঋড়ৎসধষ ঈড়হঃধপঃ) হয়েছে কেবল সেগুলোই উল্লেখিত হয়েছে। মূল ঘটনার সংখ্যা এর থেকে বহুগুণ বেশি। এভাবেই পৃথিবীর প্রতিটি দেশে বিগত পঞ্চাশ বছর পূর্ব থেকে বর্তমানে ক্রমান্বয়ে খুন, রাহাজানী, সন্ত্রাস, ধর্ষণ, সামাজিক অবক্ষয় ইত্যাদি জ্যামিতিক হারে বেড়ে চলেছে যা বর্তমানে প্রায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এবং কোন আইনই এই অবস্থার নিয়ন্ত্রণ বা উন্নয়ন ঘটাতে পারছে না।

ঠিক একই দৃশ্য আমাদের দেশেও প্রতীয়মান। আমরা আজকের এই সময়ে যে অবকাঠামোগত অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটাতে মুহুর্মূহ তৎপরতা দেখাচ্ছি, পাশ্চাত্য তা প্রায় শত বৎসর আগেই সম্পন্ন করে ফেলেছে যা আমি প্রথমেই উল্লেখ করেছি। এখনও যেখানে আমাদের একটি ফ্লাইওভার তৈরিতেই ঘাম ছুটে যায় সেখানে তারা অনেক আগেই সাগরের নিচ দিয়ে গাড়ি চলাচলের রাস্তা তৈরি করেছে, নির্মাণ শিল্পে তারা এমন উন্নতি করেছে যে আমাদের মতো দেশ তা কল্পনাও করতে পারবে না। সুতরাং কোন কারণে বা কাদের বুদ্ধিতে আমাদের নীতি নির্ধারকরা মনে করছেন যে অবকাঠামোগত উন্নয়ন করেই দেশের উন্নয়ন হয়ে গেল? এখন মানুষ খুশিতে আত্মহারা হয়ে যাবে? একটি সরকারের জনপ্রিয়তা সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যাপার। জনগণ যদি মানসিক শান্তিতে এবং সামাজিক নিরাপত্তায় বসবাস করতে না পারে তাহলে কস্মিনকালেও কোন সরকার জনপ্রিয় হতে পারবে না। বাংলাদেশ বার বার দুর্নীতিতে প্রথম হয়েছে এবং সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে সরকারি দফতরগুলোতে বিশেষ করে বিচার বিভাগ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে। অর্থাৎ যে উচ্চ-শিক্ষিত শ্রেণিটির দায়িত্ব দেশে ন্যায়, সুবিচার, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা তারাই তাদের বিদ্যাকে ব্যবহার করে লুটেপুটে খাচ্ছে দেশটাকে। ওদিকে চলছে অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং সেখানেও আছে সীমাহীন দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি, স্বজনপ্রীতি ইত্যাদি আগ্রাসী দানব।

স্বাধীনতার প্রথম দশকে যে পরিমাণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে পরবর্তি দশকে এসে নিঃসন্দেহে তার থেকে বেশী উন্নয়ন হয়েছে। তবে হ্যাঁ সরকারগুলোর কোনটা লুটপাট বেশী করেছে, আবার কোনটা কম করেছে। কেউ দুর্নীতি বেশী করেছে, কেউ কম করেছে। এটা দৃশ্যমান যে, বর্তমান সরকার অতীতের যে কোন সরকারের চেয়ে বেশী উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হাতে নিয়েছে এবং বাস্তবায়ন করেছে। এমন এমন মেগা প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে যা অতীতের সরকারগুলো করতে সাহসও করেনি। কিন্তু গত চার দশক ধরে যদি দশক ওয়ারী আইন শৃংখলা এবং সামাজিক নিরাপত্তার অবনমনমাত্রার (জধঃব ড়ভ ফবঃবৎরড়ৎধঃরড়হ) পরিসংখ্যান অবলোকন করা হয় তাহলে দেখা যাবে আমাদের কি ভয়াবহ অবনমন ঘটেছে। তাহলে দেখা গেল আমাদের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে-হচ্ছে-হবে ঠিকই কিন্তু মানুষ হিসেবে আমাদের অবনমন ঘটতে ঘটতে আমরা পশুর কাতারে চলে গেছি। আমাদের ঐক্য নষ্ট হয়েছে, জাতীয় চেতনা ভূলূন্ঠিত হয়েছে, পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব, সহমর্মিতা, নৈতিক মূল্যবোধ যেগুলো আগে ছিল সেগুলো নষ্ট হয়েছে-হচ্ছে-হবে। সর্বপ্রকার অপরাধ, পারস্পরিক দোষারোপ বৃদ্ধি পেয়েছে, খুন, অপহরণ, গুম, ধর্ষণ, ছিনতাই ইত্যাদি রাস্তাঘাটে অথবা বাসাবাড়ির অভ্যন্তরে সংঘটিত হচ্ছে। দুর্নীতি কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। অপহরণে শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ সপ্তম স্থান অধিকার করেছে (দৈনিক প্রথম আলো ৪ আগস্ট ২০১৫), বাংলাদেশের আগে যতগুলো দেশ আছে সেগুলো সবই যুদ্ধ, গৃহযুদ্ধ ও দাঙ্গা উপদ্রুত, সুতরাং সেসব দেশে অপহরণ হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু বাংলাদেশে অমন যুদ্ধাবস্থা না থাকলেও অপহরণে র‌্যাংকিং-এ চলে এসেছে এজন্য কেবল আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহনী বা সরকারই দায়ী নয়, এই দায় স্বার্থকেন্দ্রিক ও বস্তুবাদী শিক্ষাব্যবস্থা, রাজনীতিক অনৈক্য, পাশ্চাত্যের আত্মাহীন ভোগবাদী সংস্কৃতির পরিণামে আমাদের আত্মিক ধস। তাহলে আমরা অগ্রসর হলাম বৈষয়িক দিক থেকে আর পিছোলাম মানবিক গুণাবলীতে অর্থাৎ মানুষ হিসেবে। মানুষ যদি মানবিকতা হারায় তখন সেই সমাজে পাকা সড়ক, দালানকোঠা যতই হোক শান্তি আসবে না।

আমরা এটা বিশ্বাস করতে চাই যে, বর্তমান সরকার অবশ্যই মানুষের শান্তি চায়। অন্ধভাবে কারো সমালোচনা করা আমাদের নীতি নয়, আমরা মনে করি, যে কোনো সরকারই নিজ অবস্থানের স্থিতিশীলতার স্বার্থেই দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আমরা সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের, সুশীল এবং সচেতন মানুষদের এই কথাটিই বলতে চাচ্ছি যে, আপনারা যদি মানুষকে প্রকৃতই শান্তি দিতে চান তাহলে শুধুমাত্র অর্থনৈতিক এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নেই কাক্সিক্ষত শান্তি আসবে না। বরঞ্চ ষোল কোটি মানুষকে একটি আদর্শভিত্তিক জাতিতে পরিণত করতে হবে। তাদেরকে এমন শিক্ষায় সুশিক্ষিত করতে হবে যাতে করে প্রতিটি মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হবে মানবতাবোধ, সহমর্মিতা, দেশপ্রেম, তারা হবে নৈতিক চরিত্রে বলিয়ান, সামাজিক কর্তব্যের প্রতি ন্যায়নিষ্ঠ, রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্যশীল, জাতীয় স্বার্থে আত্মবিসর্জনে সদাপ্রস্তুত। সেই শিক্ষা আমাদের সাধারণ বা মাদ্রাসা উভয় শিক্ষা ব্যবস্থায়ই অনুপস্থিত। মাদ্রাসা থেকে লক্ষ লক্ষ আলেম বের হয়ে আসছেন আরবি ভাষা (ঘড়ঃযরহম সড়ৎব ঃযধহ অৎধনরপ ষধহমঁধমব) শিখে কিন্তু তারা প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা সেখান থেকে পান নি, তারা ইসলামের সাম্যের, ত্যাগের, পরমতসহিষ্ণুতার, ঐক্যের, মানবতার জন্য, দেশ ও সমাজের জন্য জীবন সম্পদ উজাড় করে দেয়ার শিক্ষা মাদ্রাসা থেকে পান নি। তারা কেবলই ব্রিটিশদের তৈরি করা সিলেবাসের উপর পড়াশুনা করে একটি বিকৃত ইসলাম শিখে সার্টিফিকেট হাসিল করছেন এবং স্বার্থপর ও আত্মকেন্দ্রিক মোল্লা-পুরোহিত হয়ে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছেন। আর সাধারণ শিক্ষার মাধ্যমে বড় বড় সার্টিফিকেটধারী ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজ্ঞ ইত্যাদি বের হয়ে আসছেন, কিন্তু সেখান থেকে দেশপ্রেমিক বের হচ্ছেন কতজন। ঐ শিক্ষায় শিক্ষিতদের মধ্যে দেশের কল্যাণে নিজের সর্বস্ব বিলীন করার মতো লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর, বরঞ্চ দেশকে বিক্রি করে দিয়ে নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থ উদ্ধার এবং বিদেশে গাড়ি বাড়ি করার প্রবণতা সম্পন্ন লোকেরাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তৈরি হচ্ছে। অপরকে হত্যা করে, ষড়যন্ত্র করে, চূড়ান্ত দুর্নীতি করে, খাদ্যে বিষ, পণ্যে-ওষুধে ভেজাল মিশিয়ে ইত্যাদি যাবতীয় অপকর্মের মাধ্যমে কী করে আমি নিজে সমৃদ্ধ হবো, টাকা-পয়সা বা বৈষয়িক সম্পত্তিতে অন্য সকলকে টেক্কা দেব এই হলো অধিকাংশ শিক্ষিতদের একমাত্র ধ্যান-জ্ঞ্যান।

শিক্ষিতদের সম্পর্কে আমার এই মন্তব্যে ক্ষুদ্ধ হওয়ার কিছু নেই। কেননা, এটা হলো নেট রেজাল্ট, যেমন, “বৃক্ষ তোমার নাম কি? ফলেই পরিচয়।” ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে ব্রিটিশরা যে বৃক্ষ রোপন করেছিল, সে বৃক্ষ থেকেই এই ফল আমরা লাভ করছি, সুতরাং সেটা যে বিষবৃক্ষ তা আর ব্যাখ্যা করে বোঝাবার দরকার করে না। তারপরেও আমরা সেই বিষবৃক্ষকেই সার দিয়ে, পানি দিয়ে লালনপালন করে চলেছি, প্রতিবছর তার কাছেই সুমিষ্ট আমের আশা করছি। কারণ আমাদের বদ্ধমূল ধারণা হয়ে গেছে যে, এই বৃক্ষই অমৃত ফল দেবে, বর্তমানের বিষফলের জন্য দায়ী আমাদের পরিচর্যার ত্র“টি। আসলে এর বাইরে কোনো বিকল্পও এ সময়ে দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। এদিকে পৈশাচিক, নিষ্ঠুর, নির্মম ঘটনাবলী দৈনিক ঘটে চলেছে। একটি ঘটনার রেশ কেটে যাওয়ার আগেই তার চেয়ে আরো নিষ্ঠুর আরেকটি ঘটনা ঘটছে। যেন নিষ্ঠুরতার প্রতিযোগিতায় নেমেছে মানবজাতি। দৈনিক পত্রিকার পাতায় এই সব খবরই মুখ্য। সমাজের চিন্তাশীল মানুষ আজ দিশেহারা, চোখে অন্ধকার দেখছে, কিন্তু পরিত্রাণের পথ খুঁজে পাচ্ছে না।

আমরা হেযবুত তওহীদ যে কথাটি বলতে চাই সেটা হলো, আপনারা যারা শাসন ব্যবস্থার উচ্চ পর্যায়ে আছেন, তাদের অনেকেই নামাজ পড়েন, রোজা রাখেন, ধর্ম-কর্ম পালন করেন। আমরা অন্ধ সমালোচনাকারীদের মতো বলতে রাজি নই যে, আপনাদের এই সমস্ত উপাসনা-ইবাদত লোকদেখানো। আমরা বিশ্বাস করতে চাই যে আপনারা সত্যিই ধর্মবিশ্বাস (ঈমান) ধারণ করেন, আল্লাহ বা সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করেন। যেহেতু আপনারা আল্লাহতে বিশ্বাস করেন, সেহেতু অবশ্যই স্বীকার করবেন যে আল্লাহ এখানে এই ধর্মবিশ্বাসী জনগোষ্ঠির জীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। আল্লাহ অতীতে যুগে যুগে কোন সমাজকে অন্যায়, অশান্তি, অর্থনৈতিক ও সর্বপ্রকার অবিচার থেকে রক্ষা করার জন্য মহামানব পাঠিয়েছেন এবং তাদের সাথে তাঁর পক্ষ থেকে সঠিক পথনির্দেশ (হেদায়াহ, জরমযঃ ফরৎবপঃরড়হ) পাঠিয়েছেন, জ্ঞান (কহড়ষিবফমব) পাঠিয়েছেন। আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞানের উপর ভিত্তি করেই আজকের ধর্মগুলি দাড়িয়ে আছে, যদিও সেগুলোর শিক্ষার অনেকটাই বিকৃত হয়ে গেছে। সেই শাশ্বত অমোঘ সত্য বিধান, সেই দিকদর্শন, সেই প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা হেযবুত তওহীদের হাতে আছে, আল্লাহই তা দান করেছেন। হেযবুত তওহীদ জাতিকে সেই প্রকৃত শিক্ষা দ্বারা উদ্বুদ্ধ করতে চায়, ঐক্যবদ্ধ করতে চায় এই লক্ষ্যে যেন এদেশের মানুষের মধ্য থেকে সকল অনৈক্য, হানাহানি, অশান্তি, বৈষম্য দূর হয়। আল্লাহ যামানার এমাম জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীর মাধ্যমে যে মহাসত্য জ্ঞান আমাদেরকে দান করেছেন সেটা আমরা নিঃস্বার্থভাবে জাতির খেদমতে কাজে লাগাতে চাই। আমরা কথা দিতে পারি, এই আদর্শ ও সত্য এ জাতিকে সকল অন্যায়, অবিচার থেকে মুক্তি দিয়ে ষোল কোটি মানুষকে সোনার মানুষে পরিণত করতে সক্ষম হবে এনশাল্লাহ। কিন্তু এ কাজের প্রায়োগিক ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তাই আমরা মনে করি, আমাদের এই বিষয়গুলি নিয়ে সরকারের যথেষ্ট বিচার বিশ্লেষণের বিশেষ প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

বাংলাদেশেরপত্র/এডি/এ

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *