Connect with us

কুড়িগ্রাম

কুড়িগ্রামে কলেজ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

Published

on

কুড়িগ্রাম বাংলাদেশেরপত্রকুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কুড়িগ্রাম শহরস্থ ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ খলিলগঞ্জ স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ রীতা রাণী দেব’র বিরুদ্ধে সীমাহীন দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও স্বেচ্ছাচারিতাসহ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন উক্ত প্রতিষ্ঠানে যেকোন মুহুর্তে তদন্তে আসতে পারে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, খলিলগঞ্জ স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ রীতা রানী দেব হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে কলেজে যোগদান করেন। উলিপুর উপজেলার পাঁচপীর ডিগ্রী কলেজ থেকে এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের সময় রীতা রাণী দেব হলফনামায় স্বীকার করেন যে, তিনি ইতোপূর্বে কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকুরীরত ছিলেন না। পরবর্তীর্তে অত্র প্রতিষ্ঠানে নতুন ইনডেক্স প্রাপ্ত হয়ে বেতন-ভাতাদি উত্তোলন করতেন। কিন্তু কলেজের তৎকালীন সভাপতি ও জেলা প্রশাসক এ.আর মোল্লার মাধ্যমে নিয়োগ লাভের সময় শিক্ষা নিয়োগ নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রীতা রাণী দেব হলফনামার পরিপন্থী উলিপুর উপজেলার পাঁচপীর ডিগ্রী কলেজ-এ কর্মরত অবস্থায় প্রাপ্ত ইনডেক্স এ জ্যেষ্ঠতা উল্লেখ করে অধ্যক্ষ পদে আবেদন পূর্বক অবৈধভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেই শুরু করেন সীমাহীন দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা। যোগদানের পর হতে প্রায় ২০জন শিক্ষক নিয়োগের ডোনেশনের ১ কোটি ২২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক একাউন্টে জমা না করে সমূলে আত্মসাত করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন রীতা রাণী দেব।
অভিযোগ রয়েছে, বর্তমান অধ্যক্ষ রীতা রাণী দেব দায়িত্বভার গ্রহণের পর হতে যে সমস্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন তা সম্পূর্ণরূপে গোপনে এবং নিয়ম বহির্ভূতভাবে করেছেন। এতে টাকার পরিমাণকে যোগ্যতার মাপকাঠি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এছাড়াও তিনি নিজের আত্মীয় স্বজনকে বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিয়েছেন। এসব অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে।
অত্র প্রতিষ্ঠানের স্কুল শাখার উচ্চতর শ্রেণি এবং কলেজ শাখার ছাত্র-ছাত্রীদের কমন রুম নেই, খেলাধুলা ও পাঠাগার নেই। ল্যাবরেটরীতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও উপকরণ নেই। কলেজ শাখার ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য টয়লেট ও পানীয়জলের ব্যবস্থা নেই। নিয়মিত শিক্ষার পাশাপাশি সাহিত্য, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা এবং স্কাউটিং ও রেড ক্রিসেন্ট’র কোন ইউনিট নেই। সব মিলিয়ে ভঙ্গুর অবস্থা বিরাজ করছে খলিলগঞ্জ স্কুল এন্ড কলেজে। অথচ রীতা রানী দেব যোগদানের পূর্বে ঐতিহ্যগতভাবে যা বিদ্যমান ছিল। প্রতিষ্ঠানের নানা সমস্যা থাকলেও তার উন্নয়ন না করে ডোনেশনের সম্পূর্ণ টাকা কোন খুঁটির জোরে আত্মসাত করেছেন তা কুড়িগ্রামবাসী জানতে চায়?
অধ্যক্ষ রীতা রাণী দেব শুধু ডোনেশনের মাধ্যমে শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগে দুর্নীতি করেননি, স্বজনপ্রীতিরও এক নিকৃষ্ট কাহিনীর সৃষ্টি করেছেন। অধ্যক্ষ তার আমলে স্বামী সৈলেন বাবুর আপন ছোট ভাইয়ের স্ত্রী চনো রাণী সহ ৬জন নিকট আত্মীয়কে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন। শুধু এই ৬ জনই নয় তার স্বজাতী, বিশেষ একটি স¤প্রদায়ের লোকদেরও নিয়োগ দিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, অধ্যক্ষ রীতা রানী দেব হিসাব শাখার কিছু অসৎ কর্মচারীর সাথে আতাঁত করে ভূয়া ভাউচার দিয়ে অগণিত টাকা বেহাত করেছেন। শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি ও অন্যান্য ফি বিনা রশিদে গ্রহণ করে থাকেন। যা দক্ষ চাটার্ড একাউন্টস’র মাধ্যমে ১০ বছরের হিসাব নিরীক্ষা করলেই অধ্যক্ষের সীমাহীন দুর্নীতি বেরিয়ে আসবে।
খলিলগঞ্জ স্কুল এন্ড কলেজে ইতোপূর্বে গণতান্ত্রিক নিয়মে গভর্ণিং বডির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতো। কিন্তু বর্তমান অধ্যক্ষ যোগদানের পর হতে নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য গোপনে কাগজে-কলমে সিলেকশনে নিজের আত্মীয় স্বজনকে কমিটিতে পদ-পদবী দিয়ে অনির্বাচিত কমিটির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা কার্যক্রম জোরাতালি দিয়ে চালিয়ে আসছেন। যার ফলশ্রæতিতে অধ্যক্ষের বেপরোয়া দুর্নীতি যেন দেখার কেউ নেই।
এমতাবস্থায় খলিলগঞ্জ স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ রীতা রাণী দেব’র সীমাহীন দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং স্বেচ্ছাচারিতা অবসানে সচেতন শিক্ষানুরাগী, শিক্ষার্থী অভিভাবক এবং এলাকাবাসী সরেজমিনে তদন্তপূর্বক দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষ রীতা রাণী দেবের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শিক্ষামন্ত্রীসহ দুর্নীতি দমন কমিশন ও সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছে।
এ ব্যাপারে খলিলগঞ্জ স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ রীতা রাণী দেব’র নিকট তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সর্ম্পকে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারবো না। আপনি ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এনামুল হক চাঁদ ভাইয়ের সাথে কথা বলেন।
খলিলগঞ্জ স্কুল এন্ড কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি প্রবীণ আইনজীবী এটিএম এনামুল হক চৌধুরী চাঁদ জানান, আমি নতুন কমিটিতে এসেছি। আমার কমিটিতে আসার পুর্বে কি হয়েছে জানি না। আমি একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগপত্রটি শিক্ষামন্ত্রী, স্থানীয় সংসদ সদস্য, দুর্নীতি দমন কমিশন, শিক্ষা মন্ত্রনালয় ও শিক্ষাবোর্ড সহ সরকারী, বে-সরকারী বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। যদি শিক্ষা মন্ত্রানালয় থেকে অভিযোগের প্রেক্ষিতে কোন তদন্ত আসে তাহলে আমি স্বচ্ছতার জন্য সে তদন্ত কমিটিকে সর্বাত্মক সহযোগীতা করবো।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *