Connect with us

দেশজুড়ে

কেঁচোসারে সফলতার মুখ দেখছেন ভোলার কৃষকরা

Published

on

ভোলা প্রতিনিধি:
ভোলায় পরিবেশবান্ধব কেঁচো সার তৈরিতে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের। সদর উপজেলার ভেদুরিয়া, ভেলুমিয়া ও পরাগঞ্জের দুই শতাধিক কৃষক এ সার প্রস্তুত করে সফলতার মুখ দেখছেন।
ইউরিয়া, টিএসপিসহ অন্যান্য সারের তুলনায় এ সার জমির জন্য অত্যন্ত উপযোগী হওয়ায় ভালো ফলন হচ্ছে তাদের। এছাড়া, উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় অনেকেই এ সার বাজারে বিক্রি করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
খামারি কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একটি মাটির পাত্রে (টালি) নিয়ে তাতে কেঁচো ও গোবর দিয়ে মিশ্রণ ঘটানো হয়। এভাবে ৩০/৩৫ দিন পর সার তৈরি হয়। গোবর খেয়ে কেঁচো যে মল তৈরি করে তা সারে পরিণত হয়। পরে, তা রোদে শুকিয়ে জমিতে দেওয়ার উপযোগী করা হয়। এক হাজার কেঁচো ও পরিমাণ মত গোবর থেকে ৪০০/ ৪৮০ কেজি সার উৎপন্ন হয় বলে কৃষকরা জানান। তারা আরো জানান, গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা থেকে তিন দিনের প্রশিক্ষণ নিয়ে এ সার তৈরি করার প্রক্রিয়া শিখেছেন তারা। এতে উৎপাদন খরচ নেই বললেই চলে।
ভেদুরিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম চরকালী গ্রামের খামারি ছিদ্দিক হাওলাদার জানান, এ বছর ২০ শতাংশ জমিতে গম, ধান ও ডাল চাষ করেছেন। এসব ক্ষেত্রে কেঁচো সার প্রয়োগ করা হয়েছে। ফলন অনেক ভালো। তিনি জানান, কেঁচো সার সব ধরনের ফসলের জন্যই উপযোগী। তাই অন্য সারের তেমন প্রয়োজন হয় নি।
কৃষাণী ফিরোজা বেগম বলেন, কেঁচো সারের তার দু’টি প্রজেক্ট রয়েছে। নিজ জমিতে ওই সব সার ব্যবহারের পাশাপাশি, বাজারেও বিক্রি করছি, ভবিষ্যতে আরো বেশি পরিমাণ উৎপাদন করবো।
চরকালী গ্রামের কৃষক আব্দুল মালেক বলেন, প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি হওয়ার ফলে এ সারের কোনো ক্ষতিকর প্রভাব নেই, আমরা অনেকেই এর উৎপাদন প্রক্রিয়া শিখেছি, এখন সবাই এ কাজ করে নিজে জমিতে প্রয়োগ করছি, অন্যদের উৎসাহিত করছি। ধান, কুমড়া, লাউ, গম, বরবটি ও টমেটো ক্ষেতে কেঁচো সার প্রয়োগ করেছেন জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ক্ষেতের বর্তমান অবস্থা খুবই ভালো। ভেদুরিয়া, ভেলুমিয়া ও পরানগঞ্জ এলাকার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, সার প্রস্তুত করা, গোবর ও কেঁচো সংগ্রহ, রোদে শুকানোসহ বিভিন্ন কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক-কৃষাণী ও খামারিরা। সার তৈরিতে উৎপাদন খরচ কম থাকায় এর প্রতি আগ্রহ অনেক বেশি। তাদের দেখে এখন অনেকেই কেঁচো সার তৈরির উৎসাহ খুঁজে পেয়েছেন। সারের ক্ষতিকর প্রভাব না থাকায় ও পরিবেশবান্ধব হওয়ার ফলে দিন দিন এর ব্যাপক প্রসার ঘটছে।
ভেদুরিয়ার কৃষক আব্দুল বারেক বলেন, কয়েক মাস আগে প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রথম বারের মতো কেঁচো সার উৎপাদন করেছি, এসব সার এখন আমি আমার নিজ জমিতে প্রয়োগ করছি। অন্য সারের তুলনায় এটা অনেক ভালো। তাছাড়া পোকা-মাকড়ের আক্রমণও খুবই কম।
কৃষাণী জোৎøা বলেন, এ মৌসুমে দুই শতাংশ জমিতে গম, মুগ ডাল, মশুর ডাল ও সয়াবিন চাষ করেছি। অন্য বছর বাজার থেকে সার কিনে এনে জমিতে দিতো হতো। কিন্তু এ বছর বাজার থেকে কোনো সার কেনা হয় নি, নিজেরা কেঁচো সার তৈরি করেছি।
গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন মহিন বলেন, জেলা সদরের তিনটি ইউনিয়নে কেঁচো সার তৈরির জন্য ২০০ জনকে আমরা প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এর মধ্যে ১২৫ জন কৃষক ও খামারি কেঁচো সার তৈরি করছে। আমরা এ সার তৈরিতে কৃষকদের ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করেছি, কৃষকরাও অত্যন্ত খুশি। ভবিষ্যতে এর আরো বেশি প্রসার ঘটানোর চেষ্টা করা হবে।
ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রমেন্দ্র নাথ বাড়ৈ বলেন, কেঁচো সার তৈরির বিষয়টি আরো বেশি জনপ্রিয় করে তুলতে আমরা কৃষকদের উৎসাহিত করছি। অনেকেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে এ সার প্রস্তুত করছেন।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *