Connect with us

চট্রগ্রাম

চট্টগ্রামে কলসভর্তি স্বর্ণমুদ্রা ! অভিনব প্রতারণার ফাঁদ

Published

on

PicsArt_1440359904198চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : চট্টগ্রাম নগরীতে এবার প্রতারণার নতুন ফাঁদ ‘কলসভর্তি স্বর্ণমুদ্রা’। শুনতে অবাক লাগলেও এমননি এক ঘটনা ঘটেছে নগরীর বাকলিয়া থানাধীন কালা মিয়া বাজার এলাকায়। রোববার সকালে নগরীর কালা মিয়া বাজার এলাকায় একটি বাসা থেকে সোর্সের দেয়া তথ্য মোতাবেক ৩টি পিতলের কলস উদ্ধারসহ ৪জনকে আটক করেছে স্থানীয় থানা পুলিশ।

কলসভর্তি স্বর্ণের মুদ্রার লোভ দেখিয়ে সংঘবদ্ধ একটি প্রতারক চক্র প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে বলে জানিয়েছে বাকলিয়া থানা পুলিশ। থানা পুলিশের তদন্তে ওই চক্রের প্রতারণার রহস্য উদঘাটন হয়েছে এবং প্রতারক চক্রের সদস্য সন্দেহে ৪ জনকে আটক করা হয়েছে।

আটককৃত ৪ সদস্য হল, ইউনূস আহমেদ চৌধুরী (৬৫) ও তার ছেলে শহীদুল ইসলাম চৌধুরী (৩৭) এবং পুলিশের সোর্স পারভেজ শেখ (৩৭) ও তার সহযোগী মো.শফি (২৬)। এছাড়াও প্রতারক চক্রের আরও কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের জন্য নগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান নেমেছে থানা পুলিশ।

নগরীর বাকলিয়া থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন জানিয়েছেন, ওই এলাকার একটি বাসা থেকে সোর্সের দেয়া তথ্য মোতাবেক তিনটি পিতলের কলস উদ্ধার করা হয় এবং এ চক্রের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ৪ জনকে আটক করা হয়েছে। এ চক্রের মূল হোতা হিসেবে ইউনূস বৈদ্য এবং সহযোগী হিসেবে আবু তালেবসহ আরো কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শহীদুলের বাসায় স্বর্ণের মুদ্রাভর্তি ৩টি কলস থাকার কথা থানা পুলিশকে জানায় পারভেজ শেখ (৩৭) নামের একজন। সে রাঙামাটিতে পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করে। পুলিশ প্রথমে পারভেজকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এ সময় পারভেজ শেখের কাছে তারই নিজের পাঁচ ধরনের ভিজিটিং কার্ড পাওয়া যায়। ও গুলোতে সংবাদ মোহনা নামে একটি অনলাইন পত্রিকার রিপোর্টার, জাতীয় পার্টির রাঙামাটি পৌর কমিটির সাধারণ সম্পাদক, রাঙামাটির পাহাড়িকা সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, বাংলাদেশ কনজ্যুমার রাইটস সোসাইটি’র (বিসিআরএস) চট্টগ্রাম বিভাগের পরিদর্শক, আর্ন্তজাতিক মানবাধিকার সংস্থার চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-পরিচালক এবং আইন সহায়তা কেন্দ্রের চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-পরিচালক হিসেবে তার পরিচয় লেখা আছে বলে জানায় পুলিশ।

এত পদবির কার্ড সম্পর্কে জানতে চাইলে ওসি মোহাম্মদ মহসিন হেসে ফেলেন এবং জানান, এত পদ-পদবির বিষয়ে পারভেজকে জিজ্ঞেস করা হলে সে বলেছে পুলিশের ডিস্টার্ব থেকে বাঁচতেই নাকি এত পদবির কার্ড সে ব্যবহার করে। এজন্য কোথাও সাংবাদিক, কোথাও মানবাধিকার কর্মী পরিচয় দেয় সে। তবে পুলিশের ধারণা, সেও এই প্রতারক চক্রের বিষয়ে অনেক কিছু জানে। অার এজন্য তাকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করে চক্রের সদস্যদের সন্ধান নেবের চেষ্টা চালাচ্ছি।

এছাড়া ইউনূস এবং তার ছেলের কথা পুলিশের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি। তারাও চক্রের সঙ্গে জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে। এজন্য আপাতত তাদের ৫৪ ধারায় আটক দেখানো হয়েছে বলে জানান ওসি। প্রতারক চক্রের বাকী সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযানে পুলিশ মাঠে নেমেছেে চলছে বলে জানান ওসি মোহাম্মদ মহসিন।

‘কলসভর্তি স্বর্ণমুদ্রা’ রহস্যের ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, ইউনূস আহমদ চৌধুরী চন্দনাইশ উপজেলার বরকল ইউনয়িনের কানাইমাদারি গ্রামের বাসিন্দা মৃত আব্দুল হাকিমের ছেলে। তিনি তার গ্রামের বাড়িতেই থাকেন। তবে তার দুই ছেলে নগরীর কালা মিয়া বাজার এলাকায় বাসা ভাড়া বাসায় থাকেন।

তারই ছেলে অাটক শহীদুল জানিয়েছেন, গত রমজানে আবু তালেব নামে পূর্বপরিচিত এক লোক তার বাবাকে বলে তাদের (ইউনূস) চন্দনাইশের বাড়ির পেছনে মাটির নিচে তিনটি স্বর্ণের মুদ্রাভর্তি কলসি আছে। সেগুলো তুললে কোটি কোটি টাকার স্বর্ণের মুদ্রা পাওয়া যাবে। আবু তালেবের কথায় তার বাবা লোভে পড়েন। আবু তালেব তার বাবাকে অারো জানায়, মানিকছড়ির ইউনূস বৈদ্য নামে এক তান্ত্রিক স্বপ্নে স্বর্ণের মুদ্রাভর্তি কলসগুলো ওখানে অাছে বলে দেখেছেন। আবু তালেব ইউনূস বৈদ্যের সঙ্গে তার বাবার সঙ্গে পরিচয় করান এবং রমজানের মধ্যে কোন এক রাতে ইউনূস বৈদ্য চন্দনাইশের বরকলে তাদের গ্রামের বাড়িতে আসে। তখন ওই তার বাবা ও ওই ২জনসহ মিলে মাটি খুঁড়ে লাল কাপড়ে মোড়ানো তিনটি পিতলের কলস সেখানে পায়। এ সময় কলসগুলোতে ঢাকনা দেয়া ছিল। ঢাকনাগুলো খুললে বিপদ হবে ওই ইউনূস বৈদ্য জানান তার বাবাকে। তাকে কলসগুলো শহরে নিয়ে নিরাপদ কোন জায়গায় রাখতে বলেন ওই বৈদ্য। এছাড়া সেগুলো গলিয়ে স্বর্ণের বল তৈরি করে দেয়ার জন্য চার লক্ষ টাকা তার বাবার কাছে দাবি করা হয়। সরল বিশ্বাসে তিনি ওই টাকাগুলো দেন বলেও জানায় শহীদুল।

শহীদুল অারও বলেন, স্বর্ণের কলসি এবং টাকা দেবার কথা তার বাবা তাকে প্রথমে কিছুই জানাননি। ঈদুল ফিতরের দু’য়েকদিন আগে তার বাবা ইউনূস ওই তিনটি কলস এনে তার বাসায় রাখেন। কথা ছিল যে মানিকছড়ির ইউনূস বৈদ্য এসে কলসগুলো নিয়ে যাবেন এবং গলিয়ে স্বর্ণের বল বানিয়ে তার বাবা ইউনূস অাহমদকে ফেরত দেবেন। কিন্তু ওই বৈদ্য ও তালেব নামের ওই ব্যক্তি আর আসেননি। পরে সোর্স পারভেজ শেখের দেয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে পুলিশ রোববার সকালে কালা মিয়া বাজারে শহীদুলের বাসায় গিয়ে পিতলের তিনটি কলস ও তাকে অাটক করে থানায় নিয়ে অাসে। এরপর তার বাবাকেও (ইউনূস আহমেদ চৌধুরী) খবর দিয়ে এনে থানায় অাটক করা হয়। তবে পুলিশ কলসগুলো খুলে সেখানে কোন স্বর্ণমুদ্রা পায়নি বলেও জানান অাটককৃত শহীদুল।

বাংলাদেশেরপত্র/এডি/আর

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *