Connect with us

জাতীয়

চট্টগ্রামে মা-মেয়েকে গলা কেটে হত্যা

Published

on

নিজস্ব প্রতিনিধি:  নগরীর সদরঘাট থানার দক্ষিণ নালা পাড়া এলাকায় নিজ ফ্ল্যাটে নৃসংশভাবে অন্তসত্ত্বা মা ও স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাড়ীর দুই দারোয়ানসহ চারজনকে আটক করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে দক্ষিণ নালা পাড়ার ৫৩৫ হোটেল আল ইসলামিয়া নামের ৬ষ্ট তলা ভবনের ৪র্থ তলায় এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ, সিআইডি, ডিবি ও র‌্যাবের একাধিক টিম ঘটনাস্থলে এসে কাজ করছে। ঘটনাস্থল থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা ছুরি ও তাদের ব্যবহৃত একাধিক আলামত জব্দ করেছে ডিবি ও সিআইডির তদন্ত টিম।

নিহতরা হলেন, মাংস ব্যবসায়ী শাহ আলমের অন্তসত্ত্বা স্ত্রী নাসিমা বেগম (৩৫) ও মেয়ে রিয়া আক্তার ফাল্গুনী (৯)। রিয়া পূর্ব মাদারবাড়ি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী। তাদের দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে অন্য দুই ছেলে হৃদয় হোসেন (১৪) ও রিয়াদ হোসেন (১২) মিউনিসপ্যাল মডেল হাইস্কুলের ৬ষ্ট শ্রেণীর ছাত্র। ঘটনার আধাঘন্টা আগে দু’জনেই বাসা থেকে স্কুলে যায়।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বাসার কাছেই গলির মুখে একটি মুরগীর দোকান এবং কিছুদূরে খাসীর মাংস বিক্রি করতেন শাহ আলম। তাদের গ্রামের বাড়ী কুমিল্লা জেলার মুরাদ নগর উপজেলার পূর্বধলা গ্রামে। মাস চারেক আগে তারা ওই ভবনের ৪র্থ তলার একটি ফ্ল্যাটে উঠেন। সেখানে শাহ আলম তার স্ত্রী ও তিন ছেলে মেয়ে ছাড়াও তার শ্যালক ও এক দোকান কর্মচারিকে নিয়ে থাকতেন।

বৃহস্পতিবার সকাল পৌণে ৯টার দিকে মাংসের দোকানে যান শাহ আলম। তারও আগে শ্যালক আলাল ও দোকান কর্মচারি বাসা থেকে বের হয়ে যান। এরমধ্যে ৯ টা ৭মিনিটে স্বামী শাহ আলম তার স্ত্রী নাসিমা বেগমকে ফোন করে ছেলেদের স্কুলে পাঠিয়ে দেওয়ার বিষয়ে খোঁজ খবর নেন। এসময় নাসিমা তার স্বামীকে জানান, দুই ছেলেকে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। শাহ আলম স্ত্রীকে ছেলেদের তার দোকানে পাঠিয়ে দিতে বলেন। দোকান থেকে বড় ভাইয়ের মাধ্যমে ছেলে রিয়াদ ও হৃদয়কে স্কুলে পাঠান শাহ আলম।

এরপর সকাল ১০টার দিকে বাসার গৃহপরিচারিকা জামেনা বেগম দরজা খোলা পেয়ে বাসায় ঢুকে ড্রয়ং রুমে গলা কাটা অবস্থায় নাছিমা বেগমকে এবং বাথরুমের দরজার ওপর গলা কাটা অবস্থায় মেয়ে রিয়া আক্তারকে দেখতে পান। এসময় তিনি চিৎকার করে উঠলে পাশের ফ্ল্যাটের লোকজন এসেও রক্তাক্ত অবস্থায় মা-মেয়ের নিথর দেহ দেখতে পান। এরপর গৃহপরিচারিকা জামেনা বেগম নিচে দৌঁড়ে গিয়ে গলির মুখে মুরগির দোকানে থাকা নাসিমার ভাই আলালকে ডেকে নিয়ে আসেন। খবর দেওয়া হয় নাসিমার স্বামী শাহ আলমকেও। এরপর খবর দিলে পুলিশ এঘটনাস্থলে আসে।

ঘটনার পর উপস্থিত সাংবাদিকদের শাহ আলম বলেন, ‘দুর্বৃত্তরা আমার স্ত্রী ও মেয়েকে হত্যার করার পাশাপাশি স্টিলের আলমারি থেকে প্রায় ৮ থেকে ১০ ভরি স্বর্ণালংকার ও নগদ ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা নিয়ে গেছে। এছাড়া যে ছুরি ব্যবহার করেছে সেটি আমার দোকান কিংবা বাসার কোন ছুরি নয়।’

এদিকে সদরঘাট থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমারা বাসার ওয়ারড্রবের উপর থেকে রক্তমাখা একটি ছোরা উদ্ধার করেছি। স্টিলের আলমারি খোলা অবস্থায় পাওয়া গেছে। আলমারির ভেতরের ড্রয়ারও খোলা পাওয়া গেছে। অলংকার রাখার একটি কাপড়ের থলে খালি অবস্থায় পাওয়া গেছে।’

খবর পেয়ে সকাল সাড়ে দশটার দিকে নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার বনজ কুমার মজুমদারের নেতৃত্বে সিএমপির একাধিক থানার ওসিসহ বিপুল পরিমাণ পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছান। ঘটনাস্থলে আসেন নগর পুলিশের উপ কমিশনার  (গোয়েন্দা) কুসুম দেওয়ান, উপ কমিশনার (দক্ষিণ) কামরুল আমীন, অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) এস এম তানভীর আরাফাত, সিনিয়র সহকারি কমিশনার (কোতয়ালি) শাহ মো.আব্দুর রউফ, বাকলিয়া থানার ওসি  মোহাম্মদ মহসিন, সদরঘাট থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ, বন্দর থানার ওসি একেএম মহিউদ্দিন সেলিম, কোতয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নেজাম উদ্দিন, সদরঘাট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মর্জিনা বেগম এবং নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ পরিদর্শক (এস আই) সন্তোষ চাকমা।

ঘটনা তদন্তে পৌণে ১২টার দিকে ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছানা সিআইডির একটি টিম। এরপরপরই ওই ফ্ল্যাটে কাউকে ঢুকতে দেয়নি পুলিশ। এমনিক দুপুর ১টার দিকে পুরো ভবনের নিচ তলায় তালা মেরে দেয় পুলিশ। সেখানে সকলে প্রবেশধিকার সংরক্ষণ করে।

দুপুর দেড়টার দিকে ঘটনাস্থলে সংক্ষিপ্ত ব্রিফিং করেন নগর পুলিশের সিনিয়র সহকারি কমিশনার শাহ মোহাম্মদ আব্দুর রউফ। তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি পুলিশ, সিআইডি, ডিবির একাধিক টিম তদন্ত করছে। ঘটনার মোটিভ সম্পর্কে আমারা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে শাহ আলমের পক্ষ থেকে যেহেতু স্টিলের আলমারি ভেঙ্গে স্বর্ণালংকার ও টাকা নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। ডাকাতির বিষয়টিও আমাদের তদন্তে রয়েছে। এছাড়া আরো বেশ কিছু ক্লু নিয়ে আমারা কাজ করছি।’

পুলিশ এঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ভবনের দারোয়ান সুজন, সিদ্দিক, গৃহ শিক্ষক রকিসহ মোট চারজনকে আটকক করেছে। নজরদারিতে রাখা হয়েছে নিহতের স্বামী শাহ আলম, কাজের বুয়াসহ আরো অনেকে। ঘটনাটি র‌্যাবও ছায়া তদন্ত করছে বলে জানান এসি রউফ।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *