ঢাকা বিভাগ
ফরিদপুরে শত বছরের পুরনো জলাশয় ভরাট করছে প্রভাবশালী মহল প্রতিবাদ করায় হামলা, হুমকি
মোঃ খালেদুর রহমান ,ফরিদপুর ঃ
আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে শহরের গোয়ালচামট মৌজায় রথখোলা সংলগ্ন সিংপাড়ায় অবস্থিত শত বছরের পুরনো সুবৃহৎ একটি জলাশয় প্রশাসনের নাকের ডগায় ভরাট করা হচ্ছে। এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় হামলা ও হুমকির শিকার হচ্ছেন প্রতিবাদকারীরা। অপরদিকে, আদালতের নির্দেশ অমান্য করে বেআইনীভাবে জলাশয় ভরাটের এ কর্মকান্ড চালানো হলেও রহস্যজনক ভূমিকা পালন করছে স্থানীয় প্রশাসন।
জলাশয় ভরাটের ক্ষেত্রে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সরাসরি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। গত বছরের ১১ জুন প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, জলাশয়সমূহ উম্মুক্ত রাখতে হবে। দায়ি ব্যক্তি, ব্যবহারকারী জনগোষ্ঠি ও সরকার যুগপৎ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে জলাশয়সমূহ উম্মুক্ত রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শণ করে জলাশয়টি ভরাট করে ভূমি গ্রাস করা হচ্ছে। নথিপত্র পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, গোয়ালচামট মৌজার ৪৩০১ নং খতিয়ানের আরএস-১৫৪৯ নং দাগে ৭৩ শতাংশ জমির উপর ব্যক্তিমালিকানাধীন এ জলাশয়টি অবস্থিত। আরএস খতিয়ান অনুযায়ী এর মালিক ছিলেন জনৈক হরেন্দ্র চন্দ্র সাহা। তবে জনৈক অলোক সেন, সুকুমার পোদ্দার ও কৃষ্ণা রানী দাসের সাথে এর মালিকানা নিয়ে হরেন্দ্র সাহার উত্তরাধিকারীদের একটি মামলা রয়েছে। সদর সহকারী জজ আদালতে হরেন্দ্র সাহার পুত্র গৌতম সাহার দায়েরকৃত ওই মামলাটি আমলে নিয়ে আদালত মামলা চলাকালীন সময়ে বিবাদমান জমির উপর একটি স্থিতাবস্থা (ইনজাংশন) জারি করেছেন।
স্থিতাবস্থা জারি থাকাবস্থাতেই ওই জলাশয়টি ভরাট করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। ১ম দফায় দুই মাস আগে জলাশয়টি ভরাটের চেষ্টা চালানো হয়। বিষয়টি আদালতকে অবহিত করার পর সেখানে স্থিতাবস্থা জারি করেন। এরপর গত ১৭ জুলাই আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ২য় দফায় বিবাদমান জলাশয়টি ভরাট করতে শুরু করে। তারা ট্রাক ভরে বালু এনে রাতারাতি ভরাট করতে থাকে। এসময় থানা পুলিশকে বিষয়টি জানালে কোতয়ালী থানার এসআই বিপুল চন্দ্র দে এসে ভরাট না করার নির্দেশ দেন। কিন্তু পুলিশ চলে যাওয়ার পর তারা মারপিট শুরু করে। গৌতমকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে মজিবর দত্ত তপনকেও মারপিট করে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা পয়সা ছিনিয়ে নেয়। থানায় মারপিটের অভিযোগ জানাতে গেলে পুলিশ টালবাহানা করছে বলে তাদের অভিযোগ।
কোতয়ালী থানার এসআই বিপুল চন্দ্র দে নয়াদিগন্তকে বলেন, আদালতের স্থিতাবস্থা জারি থাকায় পুকুরটি ভরাট না করার নির্দেশ দিয়েছি। তবে মারপিটের ঘটনায়ক্কাধিক ব্যক্তি পৃথক পৃথকভাবে কোর্টে ও থানায় অভিযোগ করায় বিষয়টি আদালত থেকে সংশোধন করে আনার জন্য গৌতম সাহাকে আজ মঙ্গলবার কোর্টে পাঠিয়েছি। একই অভিযোগেতো দুই জায়গায় মামলা করা যায় না।
গৌতম সাহার অভিযোগ, পুলিশ আদালতের নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। আমাদের উপর হামলার ঘটনারও তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এজন্য পুকুর ভরাটকারীরা পরোক্ষভাবে প্রশ্রয় পাচ্ছে। তারা আমাদের বাড়াবাড়ি না করার জন্য হুমকি দিচ্ছে।
এব্যাপারে অভিযুক্তদের পক্ষে অমিতাভ বোসের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়াদিগন্তকে জানান, পুকুরটি হাজামজা ছিল। এলাকাবাসী সেটি ব্যবহার করতে পারতো না। তাই সেটি ভরাট করে ফেলছে এলাকাবাসী। একটি মহল তাতে বাঁধা দিচ্ছে। হামলা ও টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা সঠিক না।
এব্যাপারে এলাকাবাসীর সাথে আলাপ করলে তারা নয়াদিগন্তকে জানান, ঘনবসতিপূর্ণ অত্র এলাকাটিতে এ জলাশয়টি বিরাট উপকার করতো। গৃহস্থালী নানা কাজে তারা নিয়মিত এর পানি ব্যবহার করেন। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও জলাবদ্ধতা দুর করে। ঘনবসতিপূর্ণ ওই এলাকায় অগ্নি নির্বাপণের জলাধার এটি। আদালতের নিষেধাজ্ঞা ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অমান্য করে জলাশয়টি ভরাট না করার জন্য তারা সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের প্রতি জোর দাবি জানান