Connect with us

বিবিধ

বজ্রপাত কী? এ থেকে বাঁচতে করণীয়

Published

on

বজ্রপাত 3বিডিপি ডেস্ক: কাল বৈশাখীর কারণে গত ক’দিন ধরে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটছে। বজ্রপাত রোধের কোনো উপায় নেই, তবে একটু সচেতন হলে প্রাণহানি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
তাদের পরামর্শ, বজ্রপাতের সময় গাছের নিচে আশ্রয় না নেওয়াই ভালো। উচ্চশব্দের কারণে কানের পর্দা ফেটে যেতে পারে। তাই সম্ভব হলে কানে হাত দিয়ে মাটিতে বসে পড়লে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
এছাড়া যদি হাতে ধাতব বস্তু (আংটি, চাবি, কাস্তে, কোদাল, মোবাইল) থাকে এবং তা ৬০ ফুট দূরে রাখতে পারলেও ঝ‍ুঁকি কমে যায় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
বজ্রপাত বিশেষজ্ঞ নাদিরুজ্জামান মাহমুদ বলেন, বজ্রপাত আশপাশের ধাতব পদার্থকে আকর্ষিত করে। সে কারণে কারও হাতে কাস্তে কোদাল থাকলে তিনি আক্রান্ত হতে পারেন। তাই এগুলো সরিয়ে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়।
‘একবার একটি গাছে বজ্রপাত পড়েছিলো। সেই সময়ে ওই গাছটির গোড়ায় প্লেট থেকে পানি ঢালছিলেন একব্যক্তি। এরপর তিনি আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন,’ বলেন তিনি।
নাদিরুজ্জামান মাহমুদ বলেন, পৃথিবীর তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেলে বজ্রপাতের ঝুঁকি ১০ শতাংশ বেড়ে যায়। ২০১২ সালে জার্মান বিজ্ঞানীদের প্রকাশিত এই সমীক্ষায় দেখা গেছে, পৃথিবীর উপরিতলের তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। অর্থাৎ ৪০ শতাংশ বজ্রপাতের ঝুঁকি বেড়েছে।
তিনি বলেন, বজ্রপাত নিয়ে কোনো সচেতনতা নেই। রাজনীতিবিদ ও আমলারাও বিষয় মাথায় নিচ্ছেন না বা নিতে পারছেন না। অনেকে একে নিয়তি বলেও এড়িয়ে যেতে চান।
আলাপ-চারিতায় এই বজ্রপাত বিশেষজ্ঞ জানান, বজ্রপাতে প্রতিবছর শতাধিক তাজা প্রাণ ঝরে যাচ্ছে। এ ছাড়া মূল্যবান ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অনেকে বুঝতেই পারছে না এর কারণ। ব্লিডিং কোডে একটি কন্ডিশন রাখা হলেও তা স্পষ্ট বা জোরালো নয়। এখানে আরও জোর দেওয়া প্রয়োজন।
‘মাটি বা ছনের ঘরকে বজ্রপাত থেকে রক্ষা করতে হলে ঘরের উপর দিয়ে একটি রড টেনে তার সঙ্গে দুই দিকে দু’টি রড খুটি হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে বজ্রপাত ঘরকে আক্রান্ত না করে রডের ভেতর দিয়ে মাটিতে চলে যাবে।’
তিনি বলেন, ইটের তৈরি অট্রালিকাকেও নিরাপদ করা যায়। তবে এখানে কিছুটা ভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হয়। এতে ভবন ও ভেতরে থাকা ইলেট্রিক্যাল পণ্যকে নিরাপদ করা সম্ভব। এখানে ভবনের উপরে লৌহদণ্ড দিয়ে বাইরের অংশ দিয়ে মাটির সঙ্গে সংযুক্ত করে দেওয়া।
‘ইদানীং কিছু ভবনে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে’ জানিয়ে নাদিরুজ্জামান মাহমুদ বলেন, অনেক সময় কিছুটা প্রযুক্তিগত ভুলের কারণে পুরোপুরি নিরাপদ হচ্ছে না ভবনগুলো। অনেক ভবনেই উপরে লৌহদণ্ড বসানো হচ্ছে। লৌহদণ্ডের সঙ্গে একটি তার দিয়ে মাটির সঙ্গে সংযুক্ত করা হচ্ছে।
‘এছাড়া সাধারণ বিদ্যুৎ কোনো পরিবাহীর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়। কিন্তু বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের তত্ত্বমতে, বজ্রপাত কেন্দ্রস্থল দিয়ে প্রবাহিত না হয়ে ত্বকে পরিবাহিত হয়। তাই দেয়ালের ভেতর দিয়ে বজ্রপাত নিরোধক স্থাপন খুব কার্যকর হয় না।’
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, প্রত্যেকটি ভবনের উপর পানির ট্যাংক বসানো থাকে। বজ্রপাতের সময় যদি কেউ কল থেকে পানি নে, তিনিও আক্রান্ত হতে পারেন। কারণ বজ্রপাতের পানির মাধ্যমে পরিবাহিত হয়ে পানি ব্যবহারকারীকে আক্রান্ত করতে পারে।
ভবনের গা ঘেঁষে বজ্রপাত চলে যায় সেক্ষেত্রে গ্রিলের সংস্পর্শে থাকলেও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ ছাড়া ডিশ লাইনের তার ও অন্যান্য তারেও মাধ্যমেও ঘরের ভেতরে থাকা ব্যক্তি এর শিকার হতে পারেন।

বজ্রপাত কী?
বাতাসে নিহীত শক্তির তারতম্যের কারণে মেঘে মেঘে ঘর্ষণের ফলে স্থির বিদ্যুৎ মাত্রাতিরিক্ত জমে গেলে নিকটস্থ মেঘ বা ভূমির দিকে ছুটে আসে। এর তাপমাত্রা থাকে ৪০ হাজার ডিগ্রি সেন্ট্রিগ্রেড।
ঘণ্টায় প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার কিলোমিটার গতিবেগ থাকে বজ্রপাতে। দৈর্ঘ্যে ১০০ মিটার থেকে ৮ কিলোমিটার, ব্যাসার্ধে ১০ থেকে ২৫০ মিলিমিটার পর্যন্ত। এতে ১০ কিলোমিটার থেকে ১ কোটি পর্যন্ত ভোল্টেজ থাকে।
পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ শক্তি অক্ষুণ্ন রাখার জন্য বজ্রপাত প্রাকৃতিক চার্জ হিসেবে কাজ করে। বিশ্বে প্রতি সেকেন্ডে ৪০ থেকে ১০০ টি বজ্রপাত ঘটে।

বজ্রপাতের ট্রাজেডি
বজ্রপাতে বড় ট্রাজেডি ঘটেছে ১৭৬৯ সালে। বজ্রপাতে ইতালির একটি চার্চে থাকা গান পাউডার বিস্ফোরিত হয়। এতে ৩ হাজার মানুষ নিহত হন। বাংলাদেশে ঘটেছে ২০১২ সালে, একটি মসজিদে তারাবির নামাজের সময় ৯ মুসল্লি প্রাণ হারান।
২০১৪ সালে সারা দেশে প্রায় শতাধিক লোক প্রাণ হারিয়েছে। ২০১৩ সালে ১০ জেলায় একদিনে ১৮ জন নিহত হয়েছেন। চলতি বছরে বৃহস্পতিবার (১২ মে) একদিনে ঝরে গেছে ৩৭টি তাজা প্রাণ। শুক্রবার (১৩ মে) এ সংখ্যা ছিলো ৪ জনের।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *