দেশজুড়ে
বাঘায় আম বাগানের পাশাপাশি বাড়ছে খেজুর গাছের চাহিদা
গৌরব আর ঐতিহ্যের প্রতীক মধুবৃক্ষ খেজুর গাছ। গ্রামীণ জীবনের প্রাত্যহিক উৎসব চলছে খেজুর গাছকে ঘিরে। অযতœ আর অবহেলায় বেড়ে ওঠা খেজুর গাছের কদরও বাড়ে শীত এলেই। খেজুর গাছ সুমিষ্ট রস দেয়। রস থেকে তৈরি হয় গুড় ও পাটালি। পুরো শীত মৌসুমে চলে পিঠা-পুলি আর পায়েস খাওয়ার পালা।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলা আম প্রধান এলাকা। এখানকার আমের যথেষ্ঠ সুনাম রয়েছে সারা বাংলাদেশে। ঠিক তেমনি বাঘার খেজুর গুড়ের খ্যাতিও রয়েছে দেশজুড়ে। এ এলাকায় যেমন বাড়ছে আম বাগানের চাহিদা ঠিক তেমনি বাড়ছে খেজুর গাছেরও চাহিদা। আম বাগানের পাশাপাশি শুরু হয়েছে খেজুর বাগান তৈরির পালা। গরমে যেমন আম, শীতকালে চলে খেজুর গুড়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলছেন, তাদের হিসাবে প্রতি শীত মৌসুমে বাঘার মানুষ খেজুর গুড় থেকে দুই কোটি ২০ লাখ টাকা আয় করেন। তবে বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা পাঁচ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
জানা গেছে, বাঘা উপজেলার দু’টি পৌরসভা বাঘা ও আড়ানী এবং ছয়টি ইউনিয়নে পৌরসভা ছাড়াও বাজুবাঘা, গড়গডড়ী, পাকুড়িয়া, মনিগ্রাম, আড়ানী, বাউসা ও চকরাজাপুর ইউনিয়নের অন্যান্য স্থান মিলে প্রায় ৩০ হাজার কৃষি পরিবার রয়েছে। খেজুর বাগান রয়েছে তিন হাজার। এ ছাড়া সড়কপথ, পতিত জমি ও বাড়ির আঙিনা মিলে লক্ষাধিক খেজুরগাছ আছে এই উপজেলায়। খেজুর গুড় উৎপাদনের সাথে সংশ্লিষ্টরা জানান, একজন গাছি প্রতিদিন ৪৫-৫০টি খেজুর গাছের রস আহরণ করতে পারেন। বর্তমানে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চার হাজার গাছি খেজুরগাছের রস সংগ্রহে ব্যস্ত। প্রতি মওসুমে তারা খেজুরগাছের ওপর নির্ভরশীল হয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার মনিগ্রাম বাজারের দক্ষিণে রাস্তার ধারে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্দুস সামাদের একটি জমিতে প্রায় দেড় শত খেজুর গাছের বাগান রয়েছে। এমন আরো অনেকেই খেজুর বাগান করেছে বলে জানা গেছে। এছাড়াও সড়ক পথ, রেল লাইনের ধার, পতিত জমি, জমির আইল ও বাড়ির আঙিনায় রয়েছে প্রায় দেড় লক্ষাধিক খেজুর গাছ। এছাড়াও শুরু হয়েছে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে খেজুর বাগান তৈরি। খেজুর গাছ ফসলের কোন ক্ষতি করে না। এ গাছের জন্য বাড়তি কোন খরচ করতে হয় না। ঝোপ-জঙ্গলে কোনো যতœ ছাড়াই বড় হয়ে ওঠে। শুধুমাত্র মৌসুম এলেই নিয়মিত গাছ পরিষ্কার করে রস সংগ্রহ করা হয়। রস, গুড়, পাটালি ছাড়াও খেজুর গাছের পাতা দিয়ে মাদুর তৈরি ও জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হয়। পরিকল্পিতভাবে খেজুর গাছ বৃদ্ধি করা হলে দেশের গুড় পাটালির চাহিদা মেটানোর পর বিদেশেও রপ্তানি করে অর্থ উপার্জন করার সুযোগ রয়েছে।
বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাবিনা বেগম জানান, শুধু সরকারি ভাবেই না, আমরা কৃষকদের মাঝে খেজুর গাছ লাগানো জন্য পরামর্শ দিচ্ছি। যা কৃষকদের মাঝে রস ও গুড়ের চাহিদা মেটাবে। উপজেলার ৩৫ হেক্টরে খেজুরগাছ রয়েছে। তিনি আরো জানান, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বাণিজ্যিকভাবে খেজুর গুড় উৎপাদনে সহায়তা দেয়া হলে এ শিল্পকে আরো লাভজনক করা সম্ভব। এর ফলে বিদেশেও গুড় রফতানি করা যেতে পারে।