কুড়িগ্রাম
বিলুপ্তির পথে বাঁশ শিল্প
জাহাঙ্গীর আলম: জীবনেও বাঁশ, মরনেও বাঁশ। বাঁশ গ্রামীণ মানুষের নিত্য দিনের সঙ্গী। দৈনন্দিন জীবনের ইত্যকার নানা কাজে আবহমান কাল থেকে বাঁশের ব্যবহার চলে আসছে। গ্রামীণ জনপদের নিম্ন আয়ের মানুষ যারা কাঠ,টিন অথবা ইটের তৈরি ঘর বাড়ি বানাতে পারেনা বাঁশ তাদের নিত্য সঙ্গী। বাঁশের তৈরি ঘর,বেড়া থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় গৃহস্থালী কাজের উপকরণ ডালি, কুলা,চালনা, ঘোড়পা, থেকে শুরু কওে মাছ ধরার ডারকি, পলুই পর্যন্ত বাঁশের ব্যবহার সর্বজন বিদৃত। অন্যদিকে মৃত্যুও পরও বাঁশের খাটালী থেকে শুরু করে কবরের মাচা পযন্ত বাঁশের ব্যবহার সকলের জানা। ঐতিহ্যবাহী বাঁশ ও বাঁশ শিল্প আজ ধ্বংসের মুখে। জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বাঁশ ঝাড় উজার উজার হয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন। প্রয়োজনীয় পূজির অভাব শ্রমিকের মজুরী বৃদ্ধি উপকরনের মূল্য বৃদ্ধি প্লাস্টিক সামগ্রীর সহজলভ্যতা এবং উৎপাদিত পন্যের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় ফুলবাড়ী উপজেলার সুজানেরকুিট গ্রামের বাঁশ শিল্প এখন বিলুপ্ত হতে চলেছে। বিগত কয়েক বছর ধরে বাঁশ শিল্পে চলছে চরম মন্দা। ফলে এ শিল্পের উপর নির্ভরশীল লোকজন বেকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। অনেকেই আবার এ পেশা ছেড়ে চলে যাচ্ছে অন্য পেশায়। বাঁশের উপর নির্ভর করে সুজানেরকুটি গ্রামে গড়ে উঠেছে কুটির শিল্প । আর এ পেশায় জড়িত গ্রামের প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবার। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্রামের লোকেরা রাস্তার ধারে বাড়ী আঙ্গিনায় বশে বাঁশের চটা দিয়ে চাটাই,কুলা,ডালা,চাঙ্গারী,চালান,মাছ রাখার খালই,ঝুড়ি,মোড়া,ঝাকা,মুরগির খাঁচাসহ বিভিন্ন জিনিস পত্র তৈরির কাজ করত। গৃহীনিরাও রান্না- বান্না ও ঘরের কাজ শেষে এসব তৈরিতে যোগ দিত। তৈরি সামগ্রী গ্রামে গ্রামে ফেরী ও এলাকার বাজারে বিক্রি হত। চাহিদা বেশি থাকায় এ শিল্পের সাথে জড়িতদের সাথে জীবিকার জন্য অন্য কোন পেশার প্রয়জন ছিল না। কিন্তু বর্তমানে ক্রেতার অভাব আর এ শিল্পের মূল উপকরন বাঁশের মূল্য বৃদ্ধিতে কুটি শিল্পীরা তাদের পেশায় ধরে রাখতে হিমশীম খাচ্ছে।
সুজানেরকুটি বাঁশ শিল্পি ছলিমুদ্দিন জানান, অন্যান্য জিনিষের চেয়ে বর্তমানে চাটাই /ধারা এর চাহিদা বেশি থাকায় তারা এখন ধারা তৈরি করছে। তাদের তৈরি ধারা গুনে মানে উন্নত হওয়ায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাইকরা এসে নিয়ে যান । একটি ভাল বাঁশের চার পাঁচটি ধারা তৈরি হয়। একটি ভাল মানের বাঁশ কিনতে প্রায় ১২০থেকে ১৫০ টাকায়। চার পাঁচটি ধাঁরা তৈরি করতে একটি মজুরীর খরচ পড়ে। চার পাঁচটি ধারা বিক্রি করে তাদের লাভ হয় প্রায় ২০০ টাকা। পরিবারের সবাই মিলে এ কাজ করায় কোন রকমের তাদের পুষিয়ে যায়। দুলালী বেগম বলেন,বাঁশের মূল্য বৃদ্ধির ফলে নিরূপায় হয়ে সবাই মিলে পৈত্রিক পেশা ধরে রেখেছেন। শত প্রতিকুলতার মধ্যে বাঁশ শিল্পিরা তাদের পৈত্রিক পেশা ধরে রাখতে চান। বিদেশেও বাশের তৈরি সৌখিন জিেিনষের অনের কদর আছে। সরকার এসব শিল্পিদের প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা এবং কারিগরি উপকরন সর্বারহ করলে বাঁশ শিল্পিরাও দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারবে।