Connect with us

দেশজুড়ে

‘ভাষার মাস আসলেই আমাদের কথা মনে পড়ে’

Published

on

ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি, মানিকগঞ্জ:
“ভাষার মাস আসলেই আমাদের কথা মনে পড়ে! এ মাসের শুরু থেকেই সাংবাদিক ও প্রশাসনের লোকজনের আনাগোনা শুরু হয়। সারা বছর এ বাড়ির খবর কেউ নেয় না।” এভাবেই নিজের অনুভূতির কথা জানান, ভাষা শহীদ রফিক উদ্দিন আহমদের ভাবী গুলেনুর বেগম।
মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার পারিল গ্রামে শহীদ রফিকের পৈত্রিক ভিটায় গিয়ে জানা যায়, রফিককে নিয়ে তার পরিবারের সদস্যদের আক্ষেপ ও প্রত্যাশার কথা। এখন এ বাড়িতে রফিকের ভাবী তার একমাত্র ছেলে ও পুত্রবধূকে নিয়ে বাস করছেন।
রফিক উদ্দিন আহমদের গ্রামের বাড়িতে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে রাস্তার দুই পাশের বিভিন্ন গাছ ও বাড়ির গেটের সামনে টাঙানো ২১ নিয়ে ফেস্টুন ও ব্যানার। চোখে পড়ে প্রবেশ পথেই এলাকাবাসীর সহায়তায় নির্মিত ছোট্ট শহীদ মিনারটি। যেখানে ২১ ফেব্র“য়ারিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান, রফিকের পরিবারের সদস্যরা।
রফিকদের বাড়িতে রয়েছে মাত্র দু’টি ঘর। ২০০০ সালে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা প্রশিকার সহায়তায় নির্মিত হয় এ ঘর দু’টি । একটি ব্যবহৃত হয় পাঠাগার হিসেবে, অপরটিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করেন রফিকের ভাবী।
ভাষা শহীদ রফিকের ভাবী বলেন, সারা বছরের মধ্যে ২১ ফেব্র“য়ারি দিনটাই তাদের কাছে সবচেয়ে আনন্দের। এ আনন্দ অন্য রকমের। তিনি আরো বলেন, সরকারের কাছে আমাদের একটা দাবি ছিলো। সেটি হলো শহীদ রফিকের পিতৃভূমিতে একটি শহীদ মিনার নির্মাণের। এ উদ্দেশে বাড়ির দক্ষিণ পাশে তিন শতাংশ জমিও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তাই মৃত্যুর আগে আমার একটাই স্বপ্ন যেন এই শহীদ মিনার দেখে যেতে পারি।
তিনি জানান, ভাষা শহীদ রফিক উদ্দিনের বাড়ি দেখতে দেশের বিভিন্ন জেলা ও দেশের বাইরে থেকে বিভিন্ন শ্রেণি- পেশার লোকজন আসেন। এতে যেমন অনেক আনন্দ হয় আবার কষ্টও হয়। কারণ পারিবারিক অবস্থার কারণে দর্শনার্থীদের তেমন কোনো আপ্যায়ন করতে পারি না। এমনকি একসঙ্গে বেশি লোক আসলে তাদের বসার ব্যবস্থা করাই কষ্টকর হয়ে পড়ে।
১৯২৬ সালের ৩০ অক্টোবর পারিল গ্রামে জন্ম রফিক উদ্দিন আহমদের। বাবা আবদুল লতিফ ও মা রাফিজা খাতুনের পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে রফিক ছিলেন সবার বড়। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্র“য়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে ভাষার দাবিতে ছাত্র-জনতার মিছিলে অংশ নিয়ে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন তিনি।
২০০০ সালের ফেব্র“য়ারি মাসে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করা হয় দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এ সন্তানকে। ২০০৮ সালে তার গ্রামের বাড়ির পাশে নির্মিত হয় ভাষা শহীদ রফিক উদ্দিন আহমদ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি যাদুঘর।
এছাড়া শহীদ রফিকের জন্মস্থান পারিল গ্রামের নাম পরির্বতন করে রাখা হয় রফিকনগর। তার স্মরণে সিঙ্গাইর-হেমায়েতপুর সংযোগ সড়কের প্রবেশমুখে ধলেশ্বরী নদীর ওপর নির্মিত হয় ভাষা শহীদ রফিক সেতু।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যন আব্দুল মাজেদ খাঁন বলেন, দূর-দূরান্তের ভাষা প্রেমিকরা এসে শহীদ পরিবার ও গ্রন্থাগারের বেহাল অবস্থা দেখে হতাশ হয়ে ফিরে যান। এছাড়া থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা না থাকায় ক্রমেই দর্শনার্থীদের সংখ্যাও হ্রাস পাচ্ছে। অনেকেই এসে চরম দুর্ভোগে পড়ে। গ্রন্থাগারকে কেন্দ্র করে গণমুখী কোন উদ্যোগ না থাকায় সহসাই কেউ এ মুখো হচ্ছে না।
মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক রাশিদা ফেরদৌস বলেন, ভাষা আন্দোলনে শহীদ রফিকের অবদানের জন্যে আমরা গর্বিত। এছাড়া ভাষা দিবস উপলক্ষে মানিকগঞ্জে তিন দিনব্যাপী বইমেলার আয়োজন করা হয়েছে।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *