দেশজুড়ে
মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন নারী শ্রমিকরা
ডিজার হোসেন বাদশা
সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সনদে নারী পুরুষ সমঅধিকারের কথা বলে হলেও বাস্তবে তার ভিন্ন চিত্র দেখা মিলে দেশের সর্ব উত্তরের প্রান্তিক জেলা পঞ্চগড় জনপদে। সারা দিন একজন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের সমান শ্রম দিয়েও তাদের মজুরি মিলে পুরুষের অর্ধেক। কর্মস্থলে নেই নারীদের কাজ করার তেমন পরিবেশও। তবু জীবন জীবিকার তাগিদে এই কম মজুরিতেই হাজার হাজার নারী কাজ করে যাচ্ছেন এই জনপদে। ধরেছেন সংসার পরিচালনার হালও।
এক হিসেব মতে জানা গেছে পঞ্চগড়ের পাঁচ উপজেলার প্রায় ৫০ হাজার নারী বিভিন্ন শ্রম পেশায় নিয়োজিত। এদের কেউ অবকাঠামো নির্মাণ কাজ, কেউ চা বাগানে, কেউ কৃষি কাজে, কেউ মাটি কাটা কাজে আবার কেউ পাথর শিল্পে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে। তবে শুধুমাত্র পাথর শিল্পেই প্রায় ৩০ হাজার নারী শ্রমিক কাজ করে বলে জানা গেছে।
সকাল ৭ টা থেকে বিকেল ৭ টা পযন্ত ১২ ঘন্টার রৌদ্রের খরতাপে কাজ করে ১ জন নারী শ্রমিক মজুরি পান ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা। অন্যদিকে একই সমান কাজ করে পুরুষ শ্রমিকরা মজুরি পান ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।
কম মজুরীতে নারী শ্রমিকদের দ্বারা বেশি কাজ আদায় করা যায় বলে পাথর ব্যবসায়ীরাও নারী শ্রমিকদের নিয়ে আগ্রহ দেখায়। মজুরি বেশি দাবি করলে তাদের আর কাজে নেওয়া হয়না বলেও অভিযোগ করেন অনেকে। তাই ঘরে বসে থাকার চেয়ে কম মজুরিতেই কাজ করেন তারা। খাবার সময় শুধু একটু বিশ্রাম মিলে তাদের। সেই সময়ে সবাই বাড়ি থেকে রান্না করে আনা খাবার খায়।
তার মতো আরেক নারী পাথর শ্রমিক আমেনা খাতুন (৬২)। বাড়ি পঞ্চগড় জেলা সদরের ভিতরগড়। স্বামী মারা গেছেন বিশ বছর আগে। ১ ছেলে ১ মেয়েকে বড় করে বিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু আমেনাকে খাওয়ানোর ভার কেউ নেয়নি। তাই বেঁচে থাকতে বৃদ্ধ বয়সেও তাকে পাথর ভাঙার কাজ করতে হয়।
পাথর ব্যবসায়ী মোশারফ হোসেন জানান, এ এলাকার নারীরা তেমন অন্য কোন কাজ পায়না তাই পাথর ভাঙার কাজ করতে আসে। আমরা সাধ্য মতো তাদের মজুরি দেয়ার চেষ্টা করি।
নারী পাথর শ্রমিকদের স্পর্শে এ অঞ্চলের পাথর শিল্প পৌছে গেছে দেশের সর্বত্র। তাই নারীদের কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টির পাশাপাশি নিশ্চিত করতে হবে তাদের অধিকার ও ন্যায্য মজুরি এমনটাই প্রত্যাশা জেলার সচেতন মহলের।