রাজনীতি
লতিফের সংসদ সদস্যপদ বাতিলে ইসিতে আ’লীগের চিঠি
নির্বাচন কমিশন থেকে লতিফ সিদ্দিকীর বিষয়ে আ’লীগের অবস্থান জানতে চেয়ে ইসির চিঠির পরিপ্রেক্ষিতেই সৈয়দ আশরাফ ইসিকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
নির্বাচন কমিশন সচিব মো. সিরাজুল ইসলামের কাছে রবিবার দুপুরে দলীয় প্যাডে লেখা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরিত চিঠি পৌঁছে দেন উপ-দফতর সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস ও সহ-সম্পাদক এ বি এম রিয়াজুল কবির কাওছার।
ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘দলীয় গঠনতন্ত্র মেনে সর্বসম্মতিক্রমে দলের সব সদস্যপদ ও প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে লতিফ সিদ্দিকীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি আর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেউ নন।’
সৈয়দ আশরাফ চিঠিতে সংবিধানের ৬৬(৪) অনুচ্ছেদ, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর ১২(১) অনুচ্ছেদ, সংসদের কার্যপ্রণালী বিধি ১৭৮ ধারা অনুযায়ী জাতীয় সংসদের টাঙ্গাইল-৪ আসনের সংসদ সদস্য লতিফ সিদ্দিকীর সদস্যপদ বাতিলের জন্য অনুরোধ করেন।
সংবিধানের ৬৬(৪) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ‘কোনো সংসদ-সদস্য তার নির্বাচনের পর এই অনুচ্ছেদের (২) দফায় বর্ণিত অযোগ্যতার অধীন হইয়াছেন কিনা, কিংবা এই সংবিধানের ৭০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে কোনো সংসদ সদস্যের আসন শূন্য হইবে কিনা, সে সম্পর্কে কোনো বিতর্ক দেখা দিলে শুনানি ও নিষ্পত্তির জন্য প্রশ্নটি নির্বাচন কমিশনের নিকট প্রেরিত হইবে এবং অনুরূপ ক্ষেত্রে কমিশনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হইবে।’
সংসদ সদস্য ও নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রসঙ্গে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) ১২(১) এর (বি) বলা হয়েছে, ‘কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মনোনীত অথবা স্বতন্ত্র প্রার্থী না হলে কেউ সংসদ সদস্যপদে নির্বাচন করতে পারবেন না।’ তবে বহিষ্কৃত সংসদ সদস্যের ব্যাপারে আরপিওতে কিছু বলা নেই।
ইসিতে চিঠি দেওয়ার পর মৃণাল কান্তি দাস সাংবাদিকদের বলেন, ‘লতিফ সিদ্দিকী মহানবী (সা.) সম্পর্কে অশোভন, অরুচিকর ও অগ্রহণযোগ্য বক্তব্য দিয়েছিলেন। এর জন্য তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তার বিষয়ে দলীয় অবস্থান জানিয়ে ইসিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন বলেছে, আইন অনুযায়ী আগামী ১৫ দিনের মধ্যে দলের প্রতিনিধি ও লতিফ সিদ্দিকীর উপস্থিতিতে শুনানির দিন নির্ধারণ করে জানানো হবে। শুনানির পরই ইসি সিদ্ধান্ত নেবে।’
এর আগে, লতিফ সিদ্দিকী তার অবস্থান তুলে ধরে ইসিতে চিঠি পাঠান। তাতে বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে কূটনৈতিক সফরকালে গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে বসবাসরত টাঙ্গাইলের অধিবাসীদের সঙ্গে আলাপকালে আমার বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার যে কষ্টকল্পিত, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা হয়েছে, তা আলোচনার স্বার্থে যদি ধরে নেওয়া হয় আমি ওই বক্তব্য দিয়েছি, তাহলে আওয়ামী লীগ থেকে সদস্যপদ বাতিল করার এখতিয়ার দলের কেন্দ্রীয় সংসদের নেই।’
তিনি বলেন, ‘কেননা, আমি বাংলাদেশ সরকারের তথা জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে সেখানে গিয়েছি এবং একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে উক্ত বক্তব্য দিয়েছি বলে বিবেচনা করার কোনো সুযোগ নেই। অতএব আওয়ামী লীগের সদস্যপদ থেকে আমাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তটাই ভুল ব্যাখার ওপর ভিত্তি করে নেওয়া হছে।’
গত ২৯ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী থাকাকালীন এক অনুষ্ঠানে হযরত মুহাম্মদসহ (সা.) পবিত্র হজ ও তাবলীগ-জামাত নিয়ে বির্তকিত মন্তব্য করেন প্রবীণ রাজনীতিক লতিফ সিদ্দিকী। এরপর বিএনপিসহ ইসলামী দল ও সংগঠনগুলো তার শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করে। পরে দল ও মন্ত্রিপরিষদ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। এর পর তার সংসদ সদস্য পদ নিয়ে জটিলতা তৈরি হলে গত ১৩ জুলাই প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিনকে চিঠি দেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। ১৬ জুলাই ইসি লতিফ সিদ্দিকীর অবস্থান ও এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দেয়। একই দিন সিদ্দিকীর বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকেও চিঠি দেওয়া হয়।
বাংলাদেশেরপত্র/এডি/পি