Connect with us

বিবিধ

সেপ্টেম্বরেই চূড়ান্ত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নির্মাণ প্রতিষ্ঠান

Published

on

নিজস্ব প্রতিনিধি :  মহাকাশে দেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর মূল অংশ তৈরি, উৎক্ষেপণসহ গ্রাউন্ড কন্ট্রোল স্টেশন নির্মাণের কাজ কোন প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হবে, তা আগামী সেপ্টেম্বরে চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সচিব সারওয়ার আলম।

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট নির্মাণে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হলে গত মাসে আগ্রহী চারটি কোম্পানি দরপত্র জমা দেয়। স্যাটেলাইট নির্মাণে আগ্রহী এসব প্রতিষ্ঠানের দরপত্রগুলো এখন কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি পর্যালোচনা করছে। আশা করছি, সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে এটি চূড়ান্ত করা হবে।’

জানা গেছে, দরপত্র জমা দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে চীনের গ্রেটওয়াল ইন্ডাস্ট্রি করপোরেশন, কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠান এমডিএ, ফ্রান্সের কোম্পানি থ্যালাস এলিনিয়া স্পেস এবং যুক্তরাষ্ট্রের অরবিটাল কেটিএ।

এদিকে এরই মধ্যে স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণের জন্য অরবিটাল স্লট (নিরক্ষরেখা) ১১৯.১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ লিজ নিয়েছে বাংলাদেশ। আর এ লক্ষ্যে বিটিআরসির সঙ্গে গত ১৫ জানুয়ারি একটি চুক্তি করেছে রাশিয়ার ইন্টারস্পুটনিক ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব স্পেস কমিউনিকেশন। চুক্তি অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতে হবে। অরবিটাল স্লট সংগ্রহের জন্য ইন্টারস্পুটনিককে দিতে হবে ২ কোটি ৮০ লাখ ডলার। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ৪০টি ট্রান্সপন্ডার ক্যাপাসিটি থাকবে। এর মধ্যে ২০টি ট্রান্সপন্ডার ব্যবহার করবে বাংলাদেশ, বাকি ২০টি বিক্রি করা হবে।

বিটিআরসির চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোস বলেন, ‘স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণের জন্য অরবিটাল স্লট ১৫ বছরের জন্য লিজ নেওয়া হয়েছে। তবে তা ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন্স ইউনিয়নের (আইটিইউ) নিয়ম অনুযায়ী পরবর্তী সময়ে দুই ধাপে ১৫ বছর করে আরো ৩০ বছর অর্থাৎ মোট ৪৫ বছরের জন্য নেওয়া হবে।’

তিনি বলেন, ‘স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ নির্মাণে আগ্রহী প্রতিষ্ঠান চারটির দরপত্র পর্যালোচনা করা হচ্ছে। কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি যে প্রতিষ্ঠানটিকে যোগ্য মনে করবে সেই প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি করা হবে। স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ করা গেলে বিশ্বের সব উন্নত ও আধুনিক দেশের মতো আমাদেরও তখন নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে।’

বিটিআরসির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে ২ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা দেবে সরকার। বাকি ১ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা সরবরাহ করবে যে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজ পাবে, তারা। এই প্রকল্পে সরকারের যে টাকা খরচ হবে, তা স্যাটেলাইট ভাড়া দিয়ে ৮ বছরের মধ্যেই তুলে ফেলা সম্ভব হবে। এতে পরবর্তী বছর থেকে এই প্রকল্পকে লাভজনক পর্যায়ে পৌঁছানো সম্ভব হবে।’

জানা গেছে, দেশের প্রথম বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণে ২০১২ সালের ২৯ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান স্পেস পার্টনারশিপ ইন্টারন্যাশনালের (এসপিআই) সঙ্গে চুক্তি করে বিটিআরসি। চুক্তি অনুযায়ী স্যাটেলাইটের নকশা প্রণয়ন, গ্রাউন্ড স্টেশন নির্মাণ, বাজার মূল্যায়ন, ম্যানুফ্যাকচারিং, স্যাটেলাইটের মার্কেটিং, ব্যবসায়িক পরিকল্পনা, অরবিটাল স্লট নির্ধারণ ও তরঙ্গ সমন্বয়, দেশের প্রযুক্তিবিদদের প্রশিক্ষণসহ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করবে যুক্তরাষ্ট্রের এই কোম্পানিটি। আর এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসপিআইকে দিতে হবে ৮২ কোটি টাকা। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের এই পরামর্শ প্রতিষ্ঠানটি গাজীপুরের জয়দেবপুর এবং রাঙামাটির বেতবুনিয়ায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের জন্য দুটি গ্রাউন্ড স্টেশন স্থাপনের জায়গা নির্ধারণ করেছে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, নিজস্ব স্যাটেলাইট না থাকায় দেশের টিভি চ্যানেল এবং রেডিও স্টেশনসহ ইন্টারনেট সেবাদানকারী সব প্রতিষ্ঠানই এখন বিদেশি স্যাটেলাইটের ওপর নির্ভরশীল। বর্তমানে দেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুরসহ কয়েকটি দেশ থেকে স্যাটেলাইট ভাড়া নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ জন্য বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর প্রায় ১৪ মিলিয়ন ডলার দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের সব জেলা ও উপজেলায় এখনো সাবমেরিন কেবলের নেটওয়ার্ক পৌঁছায়নি। এসব জায়গায় ইন্টারনেট সেবা দিতে হলে এখন একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে স্যাটেলাইট।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *