দেশজুড়ে
তিস্তা সেচ প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণের অগ্রগতি নিয়ে সভা
সভা শেষে নজরুল ইসলাম বলেন, দুই দেশের (ভারত-বাংলাদেশ) প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তির কাঠামো চূড়ান্ত করা হয়েছে। অচিরেই সেটি বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। চুক্তি বাস্তবায়িত হলে তিস্তায় আর পানি সংকট থাকবে না।
পাউবো ডালিয়া বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, শিগগিরই দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হবে। এ জন্য প্রস্তাবিত ২৬৬ দশমিক ৬৩ হেক্টর জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে ১১৮ দশমিক ৮৭ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। বাকি ৯২ দশমিক ৬৯ হেক্টর জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। জমি অধিগ্রহণের জন্য ইতিমধ্যে ৯৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। প্রস্তাবনায় নতুন করে যোগ হয়েছে আরও ৫৫ দশমিক ৭ হেক্টর জমি। এ জন্য সভায় আরও ১৮৮ কোটি ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এ সময় পাউবোর যুগ্ন সচিব মন্টু কুমার বিশ্বাস, পাউবো পশ্চিম অঞ্চলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রকৌশলী বেলায়েত হোসেন, পাউবোর প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাহফুজার রহমান, পাউবোর উত্তরাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আতিকুর রহমান, তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (১) জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ, তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (২) লুৎফর রহমান, পাউবোর উপসচিব তোফাজ্জেল হোসেন, নীলফামারীর ডিসি জাকীর হোসেন, দিনাজপুরের ডিসি মীর খায়রুল আলম, রংপুরের ডিসি রাহাত আনোয়ার, তিস্তা ব্যারাজের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবার রহমান, নীলফামারী পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আবু মাহমুদ শেখ, পাউবোর সৈয়দপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল সহিদ, উপ-প্রধান সম্প্রসারন কর্মকর্তা অমলেশ চন্দ্র রায়, নীলফামারীর সম্প্রসারন কর্মকর্তা রফিউল বারী, ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম, সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু ছালেহ মোহাম্মদ মুসা জঙ্গী উপস্থিত ছিলেন ।
পাউবো সূত্র জানায়, তিস্তা সেচ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার ১২টি উপজেলার সেচ এলাকা ছিল ৯১ হাজার ২২৬ হেক্টর জমি। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ হলে এর পরিধি ১ লাখ হেক্টরে উন্নীত হবে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের বিভিন্ন অবকাঠামো পরিদর্শন শেষে সন্ধ্যায় চলতি খরিপ-১ রবি মৌসুমে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার নাউতারায় অবস্থিত এস-টু-টি সেচ ক্যানেলের কপাট উন্মুক্তের মাধ্যমে সেচ কার্যাক্রমের আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছিলেন।
এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় ২০১৩ সালে এই মৌসুমে ৬৬ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও সেচ পায় মাত্র সাড়ে ২৫ হাজার হেক্টর জমি। একাধিক সুত্র জানায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, পশ্চিম দিনাজপুর, কোচবিহার ও মালদহ এলাকায় ভারত তাদের গজলডোবা ব্যারাজের মাধ্যমে সেচ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। সেখানে তাদের প্রচুর সেচ দিতে হয়।
তার উপর তিস্তা নদীর উপর একাধিক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প রয়েছে। ফলে তিস্তায় যে পরিমাণ পানি সিকিম থেকে নামছে তা পর্যাপ্ত নয়। যা ভারতের ওই সমস্ত এলাকায় চাহিদা মতো সেচ প্রদান সম্ভব হয় না। সেখানে বাংলাদেশে তিস্তার পানির পাওয়া বিষয়টি প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে শুকনো মৌসুমে তিস্তার পানি প্রবাহ আশংকাজনক ভাবে কমে যাচ্ছে। গত বছর পানি প্রবাহ ২শ কিউসেকে নিচে নেমে আসে।
তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের সম্প্রসারন কর্মকর্তা রাফিউল জানান, চলতি রবি ও খরিপ-১ মৌসুমে তিস্তা ব্যারাজ থেকে আগামী ৫ জানুয়ারী থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সেচ প্রদান শুরু করা হবে। কিন্তু উজানের প্রবাহ দিন দিন কমে আসায় তিস্তা নদীর পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। ফলে তিস্তা ব্যারাজের কমান্ড এলাকায় সম্পুরক সেচ কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। ফলে এবার রবি ও খরিপ-১ মৌসুমে (সেচ নির্ভর বোরো) আবাদের সেচ প্রদানের জন্য ১০ হাজার হেক্টর জমির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে।
গত ৩১ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার রংপুর তিস্তা ভবনে প্রধান প্রকৌশলী আতিকুর রহমানের সভাপতিত্বে সেচ প্রদানের বিষয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকের তিস্তার পানি প্রবাহ কম থাকায় চলতি মৌসুমে ১০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সরবরাহের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছে।