Connect with us

জাতীয়

আজ খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের পবিত্র ইস্টার সানডে

Published

on

নিজস্ব প্রতিনিধি: আজ খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের পবিত্র ইস্টার সানডে। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও খ্রিষ্টান সম্প্রদায় যথাযোগ্য ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করছে।

দিনটি উপলক্ষে রোববার সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ক্যাথলিক চার্চে প্রার্থনা করা হয়। খ্রিস্টধর্মানুসারীদের মতে, এই দিনে যিশুখ্রিস্টের পুনরুত্থান হয়েছিল। গুড ফ্রাইডেতে বিপথগামীরা যিশুকে হত্যা করেছিল।

মৃত্যুর পর তৃতীয় দিন রোববার যিশু পুনরুত্থান করেন। তাঁর পুনরুত্থানের এই দিনটি বিশ্বের খ্রিস্টধর্মানুসারীদের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।

ইস্টার সানডের মূল উদ্দেশ্য হলো যিশুর পুনরুত্থান পর্ব উদ্‌যাপন। পুনরুত্থান শব্দের আক্ষরিক অর্থ হলো- পুনরায় উত্থিত হওয়া, জেগে ওঠা, পূর্ণ জীবন লাভ করা, পুনরায় আরম্ভ করা, সতেজ হওয়া, সজাগ হওয়া, প্রত্যাশায় পথ চলা। শুরুর দিকে খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের উপাসনার প্রধান পর্ব ছিল পুনরুত্থান পর্ব। প্রতি রোববারেই ছোট আকারে পুনরুত্থান পর্ব উদ্‌যাপিত হতো। পরে ইস্টার সানডের সঙ্গে নানা লৌকিক আচরণ ও প্রথা মিশে উৎসবটি একটি সার্বজনীন রূপ পেয়েছে।

Easter_Sunday1-1428198159ধর্মীয় দৃষ্টিকোণে ইস্টার সানডে পালনের উদ্দেশ্য: 

ইস্টার সানডে পালনের মূল উদ্দেশ্য হলো যিশুর পুনরুত্থান পর্ব উদ্‌যাপন। ইস্টার হলো মৃত্যুর ওপর যিশুর বিজয়। মৃত্যুকে জয় করে যিশু পুনরুত্থিত হয়েছিলেন। ইস্টার আমাদের সেই পুনরুত্থানের মহান আনন্দের অংশীদার করে।

বাইবেলের বর্ণনা অনুযায়ী, যিশুখ্রিষ্ট এই পৃথিবীতে থাকাকালীন তাঁর কার্যকলাপ ও শিক্ষায় ইহুদিরা দারুণভাবে অসন্তুষ্ট হয়। বিশেষ করে নিজেকে ঈশ্বরের পুত্র দাবি করায় ইহুদিরা যিশুর ওপর দারুণভাবে ক্ষেপে যায়। তাদের মতে, নিজেকে ঈশ্বরের পুত্র দাবি করে যিশুখ্রিষ্ট ধর্ম অবমাননা করেছে, যার শাস্তি হলো মৃত্যুদণ্ড। যে কারণে ইহুদিরা যিশুকে হত্যা করার সুযোগ খুঁজতে থাকে।

এই সময় যিশু তাঁর শিষ্যদের একাধিকবার বলেন, খুব শিগগিরই ইহুদিরা তাঁকে হত্যা করবে। তবে তিনি শিষ্যদের দুঃখিত হতে বারণ করেন। তিনি বলেন, মৃত্যুর তিন দিন পর আবার জীবিত হয়ে উঠবেন।

ওই সময়ে ইহুদিদের একটা বিশেষ পর্ব বা উৎসব উপস্থিত হয়। সেই উৎসবের নাম ‘পাস্কা’ বা ‘নিস্তারপর্ব’। ওই পর্ব পালনের সময় যিশুর একজন শিষ্য ঈস্করিয়োতীয় যিহূদা ইহুদি নেতাদের কাছে গিয়ে যিশুকে ধরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। ইহুদি নেতারা এজন্য তাকে ৩০টি রুপার মুদ্রা দেয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী, রাতে যিশু যখন গেৎশিমানী নামে এক বাগানে শিষ্যদের সঙ্গে ছিলেন, তখন ইহুদি নেতা ও সৈন্য নিয়ে এসে যিহূদা যিশুকে ধরিয়ে দেয়। পরে ইহুদিরা রোমান শাসক পিলাতকে বাধ্য করে যিশুর বিপক্ষে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিতে।

গুড ফ্রাইডেতে যিশুকে ক্রুশবিদ্ধ করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ক্রুশে বিদ্ধ থাকাবস্থায় যিশু এই কাজের জন্য ইহুদিদের ক্ষমা করে যান। মৃত্যুর পর জোসেফ নামে যিশুর এক শিষ্য রোমান শাসক পিলাতের কাছে গিয়ে যিশুর দেহ কবর দেওয়ার অনুমতি চান। তিনি অনুমতি দিলে জোসেফ যিশুর দেহটি সুগন্ধি দ্রব্যে মাখিয়ে, নতুন কাপড়ে জড়িয়ে একটি নতুন কবরে, যেটি জোসেফ নিজের জন্য তৈরি করেছিলেন, সেটিতে রাখেন। কবরটি ছিল পাহাড়ের পাথর কেটে তৈরি করা একটি গুঁহা। যিশুকে কবর দেওয়ার পর একটা বড় পাথর দিয়ে জোসেফ গুঁহাটি আটকে দেন।

এদিকে ইহুদি নেতারা পিলাতের কাছে গিয়ে বলেন, যিশু জীবিত থাকতে বলেছিলেন তিনি তিন দিন পর পুনরুত্থান করবেন। যদি রাতে এসে যিশুর শিষ্যরা মৃতদেহটি চুরি করে নিয়ে গিয়ে বলে যিশু পুনরুত্থান করেছেন! তাই পিলাত যেন কবরটি তিন দিন পর্যন্ত পাহারা দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। পিলাত তাদের বলেন, তোমাদের কাছে পাহারাদার আছে, তোমরাই পাহারা দাও।

রোমান শাসকের কথামতো ইহুদি নেতারা গিয়ে কবরের মুখের পাথরটি সিলগালা করে পাহারা বসায়। এদিকে যিশুর কয়েকজন শিষ্যা বিশেষ করে মেরি ম্যাগডেলিন তাঁর মৃতদেহে মাখানোর জন্য সুগন্ধি দ্রব্য প্রস্তুত করে। রোববার খুব ভোরে তারা সেই সুগন্ধি দ্রব্য নিয়ে কবরের কাছে যায়। তারা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করে, কীভাবে পাথরটি সরিয়ে তারা কবরে ঢুকবে।

ইতিমধ্যে স্বর্গ থেকে একজন দূত এসে কবরের সামনে দাঁড়ান। তাকে দেখে পাহারাদাররা ভীষণ ভয় পেয়ে যায়। র্স্বগদূত কবর থেকে পাথরটা সরিয়ে দেন। যিশুর শিষ্যারা কবরের কাছে পৌঁছে দেখতে পান পাথরটি একপাশে সরানো রয়েছে। কিন্তু কবরে ঢুকে তারা কোনো মৃতদেহ দেখতে পান না। শুধু যে কাপড়গুলো যিশুর দেহে পরানো ছিল, সেগুলো একপাশে পড়ে থাকতে দেখেন। তখন স্বর্গদূত তাদের বলেন, যিশু মৃত্যু থেকে জীবিত হয়েছেন। তারা যেন যিশুর শিষ্যদের এই সংবাদ দেয় এবং গালীল নামক জায়গায় যিশুর জন্য একত্রিত হয়। শিষ্যরা এই কথা শুনে অত্যন্ত আনন্দিত মনে রওনা দেয়।

এদিকে যে পাহারাদাররা কবর পাহারা দিচ্ছিল, তারা গিয়ে ইহুদি নেতাদের সবকিছু জানায়। নেতারা তাদের টাকা দিয়ে বলে, তারা যেন এই কথা কাউকে না জানায়। বরং তারা যেন রটিয়ে দেয়, রাতে পাহারাদাররা ঘুমিয়ে পড়েছিল। ওই সময় যিশুর শিষ্যরা এসে তাঁর মৃতদেহ চুরি করে নিয়ে গেছে। টাকা পেয়ে পাহারাদাররা মিথ্যে কথা রটিয়ে দেয়।

পুনরুত্থানের পর যিশু গালীলে শিষ্যদের দেখা দেন। বাইবেল বলে, তিনি আরো চল্লিশ দিন পৃথিবীতে থেকে শিষ্যদের নানা শিক্ষা দেন এবং চল্লিশ দিন পর শিষ্যদের চোখের সামনে দিয়ে স্বর্গে চলে যান। যিশু চলে যাওয়ার পর এক স্বর্গদূত এসে বলেন, যিশু একদিন আবার ফিরে আসবেন এবং তাঁর অনুসারীদের স্বর্গে নিয়ে যাবেন।

সংক্ষেপে এটা হলো বাইবেল বা খ্রিষ্টবিশ্বাস অনুযায়ী ইস্টার সানডে পালনের মূল কারণ। তবে ধীরে ধীরে ইস্টার উৎসবের সঙ্গে বিভিন্ন লৌকিক প্রথা যোগ হয়েছে।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *