আন্তর্জাতিক
ইয়েমেনে উপকূলে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহী রণতরী; ইরানকে হুসিয়ারী
ইয়েমেন উপকূলে একটি বিমানবাহী রণতরী ও নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্রবাহী একটি ক্রুইজার রণতরী পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এসব রণতরী রোববার উপসাগর থেকে ইয়েমেন উপকূলের আরব সাগরের দিকে রওয়ানা হয়েছে বলে সোমবার জানিয়েছেন দেশটির কর্মকর্তারা। বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস থিওডোর রুজভেল্ট ও এর পাহারাদার ক্রুইজার ইউএসএস নর্ম্যান্ডি ইয়েমেন উপকূলে আগে থেকেই মোতায়েন থাকা যুক্তরাষ্ট্রের আরো সাতটি যুদ্ধজাহাজের বহরের সঙ্গে যুক্ত হবে। ইরান থেকে জাহাজযোগে ইয়েমেনে পাঠানো অস্ত্রের চালানের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে এসব জাহাজ আরব সাগরে পাঠানো হচ্ছে, প্রকাশিত এমন প্রতিবেদন অস্বীকার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের (পেন্টাগন) মুখপাত্র সেনা কর্নেল স্টিভ ওয়ারেন। এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী দাবি করেছে, ওই অঞ্চলের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে সেখানে উপস্থিতি বৃদ্ধি করছে তারা। “ওই এলাকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জাহাজ চলাচল পথগুলো উন্মুক্ত ও নিরাপদ রাখার উদ্দেশ্যে” সেখানে উপস্থিতি বাড়ানো হচ্ছে বলে বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে। কিছুদিন ধরে অগ্রসরমান সাতটি ইরানি জাহাজের একটি বহরের ওপর গভীর নজর রাখছেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা। ধারণা করা হচ্ছে, এসব ইরানি জাহাজ ইয়েমেনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এসব জাহাজে কী মালামাল বহন করা হচ্ছে তা অজ্ঞাত থাকায় সন্দেহ ঘণীভূত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতির মুখে ইয়েমেন উপকূলে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করছে যুক্তরাষ্ট্র। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জোশ আর্নেস্ট ইরান থেকে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের অস্ত্র সরবরাহের বিষয়টি বাস্তব বলে উল্লেখ করে এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আর্নেস্ট বলেছেন, “ইরানিরা ইয়েমেনের হুতিদের অস্ত্র সরবরাহ করছে এবং অন্যান্য সহায়তা দিচ্ছে, এমন প্রমাণ পেয়েছি আমরা। এ ধরনের সহায়তায় ইয়েমেনের সঙ্কট আরো গভীর হবে।” সম্প্রতি ইয়েমেনের শিয়া হুতি বিদ্রোহীরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি অনুগত দেশটির সুন্নি প্রেসিডেন্ট আব্দ-রাব্বু মনসুর হাদিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিয়ে দেশটির অধিকাংশ স্থান দখল করে নিয়েছে। দেশ ছেড়ে হাদি প্রতিবেশী সৌদি আরবের রিয়াদে আশ্রয় নিয়েছেন। ২৬ মার্চ থেকে হুতিদের দমনে সৌদি আরবের নেতৃত্বে মিত্র আরব দেশেগুলোর জোট বাহিনী ইয়েমেনে বিমান হামলা চালাচ্ছে। এই হামলায় সরাসরি অংশগ্রহণ না করলেও গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এদিকে, আরব দেশগুলোর প্রস্তাবে গেল সপ্তাহে হুতিদের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ।
এদিকে সৌদি নেতৃত্বে যৌথবাহিনীর বিমান হামলায় অন্তত ৪৬ জন নিহত হয়েছেন। স্থানীয় সময় সোমবার (২০ এপ্রিল) দেশটির রাজধানী সানার পশ্চিমাঞ্চলে ফাজ আত্তান জেলায় বিদ্রোহীদের ঘাঁটি সন্দেহে একটি স্থাপনায় আঘাত হানলে এ প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। সংবাদ সংস্থা ইয়েমেন পোস্টের প্রধান সম্পাদক হাকিম আল-মাসমারি বলেন, নিকট অতীতের ইতিহাসে সানায় এ বিস্ফোরণই সবচেয়ে বড়। শত শত বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। হাজার হাজার সানাবাসী অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। জানা গেছে, হামলার সময় যৌথবাহিনীর যুদ্ধবিমানগুলো থেকে মিসাইল ছোড়া হলে প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ঘটে। তবে নিহতরা বিদ্রোহী কি-না সে বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু জানায়নি সংবাদমাধ্যম। এদিকে, যে স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে, তা ইয়েমেনের সাবেক প্রেসিডেন্ট আলি আব্দুল্লাহ সালেহের অনুগত রিপাবলিকান গার্ড বাহিনীর মিসাইল ব্রিগেডের ঘাঁটি ছিল বলে দাবি করেছে সৌদি নেতৃত্বাধীন উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর যৌথ বাহিনী।