Connect with us

দেশজুড়ে

কাউনিয়ায় বোরো চাষীদের মুখে হাসি নেই

Published

on

images (10)

কাউনিয়া প্রতিনিধি: রংপুরের কাউনিয়ায় এবার বোরো ধান আবাদ করে উৎপাদন খরচ তুলতে পারছে না কৃষকরা। বর্তমান বাজারে এককেজি ধান বিক্রি করে ৩ টাকা লোকসান গুনছে কৃষকরা। ফলে চাষীদের মুখের হাসি নাই।

কৃষকরা জানায়, সরকার কৃষকদের কাছে ধান কেনার কথা বলে এখনো তা শুরু করেনি। রোদ বৃষ্টিতে ভেজা কষ্টে উৎপন্ন করা ধান হাট-বাজারে ফড়িয়া পাইকারের কাছে কম দামে বিক্রি করে লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। তারা কৃষকদের কাছে ন্যায্য মূল্যে ধান কেনার দাবি তুলেছেন। তাতে ফড়িয়া পাইকারে খপ্পর থেকে রক্ষা পাবে এই অঞ্চলের চাষীরা।

উপজেলার মীরবাগ হাটে ধান বিক্রি আসা হরিশ্বর গ্রামের কৃষক রমজান আলী (৪৬) হতাশার সুরে জানান, ‘ধান আবাদ করি লাভ নাই। বাজারত যে দরে ধান বেচা হচ্ছে তাতে কামলা খরচ, সার খরচ দিয়া আবাদ করি পোষায় না।

সাব্দী গ্রামের কৃষক আ. ওয়াহেদ জানান, এবার বিভিন্ন এনজিও থাকি ঋণ করিয়ে বোরো ধান আবাদ কইননো। তাতো ধান ভালো হইল। কিন্ত ভরা মৌসুমে বাজারত ধানের দাম নেই। তিনি চরম উৎকণ্ঠা নিয়ে জানালেন, ‘হাটোত খারাপটা ৪৫০ আর ভালোটা ৫৫০ করি মণ। এই দরে ধান বিক্রি করি হামার খরচাপাতি উটছে না। এবার অনেক আশা আচিল ধান ব্যাচেয়া এনজিওর ঋণের টাকা শোধ করি বেটির বাড়িত ভালোমন্দ খাবারসহ ইলিশ মাছ পাঠাইম। কিন্ত তাও হইচে না। দুইমন ধান বেচিয়া এক জোড়া ইলিশ মাছ হয় না। এল্যাও সার, কামলার টাকা দিবার বাকি আচে। বুড়ির কাপড় নাই। তাকো কিইনবার পাইনো না। হামারগুলার কি হইবে বাহে। তোমরাগুলা এ্যকনা বেশি করি ন্যকো ক্যানে। সরকার হামারগুলার দিকি এ্যকনা তাকাউক ক্যানে।’

হাটে ধান বিক্রি করতে আসা রাজিব গ্রামের শিক্ষিত ও সামর্থবান চাষী আমজাদ হোসেন (৫২) জানান, ২৪ শতাংশ জমিতে বোরো ধান আবাদে ৪০০ টাকার বীজ, জমি চাষে ৬০০, চারা তোলা ও রোপণ করতে ৬০০, সেচ ১১০০, দু’বার নিড়ানীতে ৮০০, ঔষধ ও ¯েপ্র ৫০০, সার ২১০০, কাটামাড়াই ১৫০০, মোট ৭৬০০ টাকা থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। আর একদোন জমিতে ধান হয় গড়ে ১২ মন। বর্তমান বাজারমুল্যে যার দাম ৬ হাজার ৬০০ টাকা। সে তুলনায় বাজারে ধানের দাম কম। ভরা মৌসুমে ধানের দাম কম হওয়ায় কৃষকরা উৎপাদন খরচ তুলতে পারছেন না। তিনি জানান, অন্য বছরের তুলনায় এবছর দ্বিগুন দামে কৃষি উপকরণ ও শ্রমিক মুজরী বৃদ্ধির কারণে বোরো চাষে কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। প্রতিকেজি ধান উৎপাদনে খরচ হয় সাড়ে ১৬ টাকা আর বর্তমান বাজারে প্রতিকেজি ধান বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ১৩ টাকা দরে। সেই হিসাবে কেজিপ্রতি ৩ টাকা করে লোকসান গুনছে হচ্ছে কৃষকরা। শুধু আমজাদ হোসেন নয়, একই কথা জানালেন হাটে আসা উপজেলার একাধিক বোরো চাষী। হাটে আসা হরিশ্বর গ্রামের কৃষক জবেদ আলী (৬৮) জানান, বর্তমান সরকার নিজেকে কৃষিবান্ধব দাবী করলেও সারসহ আনুসাঙ্গিক জিনিসের দাম বাড়িয়ে দিয়ে একের পর এক কৃষকদের তাদের উৎপাদিত ফসলের কম দাম দিয়ে কৃষকদের লোকশানের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। হাটে ধান বিক্রি করতে আসা হলদীবাড়ী গ্রামের ফিরোজ হোসেন (৪২), রাজিব গ্রামের সোনা মিয়া (৩৮), পাঞ্চরভাঙ্গা গ্রামের নুরুল মিয়া (৪৫) জানান, হাটে ফরিয়া পাইকাররা ধান কিনছে। ফলে বাজার এখন ফড়িয়াদের দখলে রয়েছে। তারাই ধানের দাম নিয়ন্ত্রণ করছে। একই কথা বলেন, হাটে আসা একাধিক কৃষক। তারা সরকারের কাছে কৃষকদের কাছে ন্যায্য মূল্যে ধান কেনার দাবি তুলেছেন।

উপজেলা চালকল মালিকরা সমিতির সভাপতি মিনহাজুর রহমান হেনা জানান, সরকার ২২ টাকা দরে ধান এবং ৩২ টাকা দরে চাল সংগ্রহ অভিযান শুরুর ঘোষনা দিলেও খাদ্য বিভাগ এখনো সংগ্রহ অভিযান শুরু করেনি। তাই উপজেলার চাউলকল মালিকরা এখনো ধান ক্রয় করা শুরু করতে পারেনি। আর এই সুযোগে একটি মধ্যস্বত্বভোগি ব্যবসায়ীরা কম দামে ধান কিনে মজুদে নেমে পড়েছেন। এতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামিমুর রহমান জানান, চলতি মওসুমে উপজেলার হারাগাছ পৌরসভাসহ ৬টি ইউনিয়নের ৮ হাজার ২৯৪ হেক্টর জমিতে গড়ে ৫০ হাজার মেট্রিকটন ধান এবং ৩৩ হাজার ১৭৬ মেট্রিকটন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ইতোমধ্যেই ৭৫ ভাগ জমির কাটাই মারাই শেষ হয়েছে। বিচ্ছিন্নভাবে রোগ-বালাইয়ের আক্রামণের পরও এবার এ অঞ্চলে বোরোর ভালো ফলন হয়েছে। তবে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় এবং ধানের দাম কম হওয়ায় কৃষকদের মুখে হাসি নাই। সরকারভাবে ধান-চাল ক্রয় শুরু হলে বাজারে ধানের দাম কিছুটা বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *